• 23 Jan, 2025

গাজা ও লেবাননে ইসরায়েলের ‘দাহিয়া ডকট্রিন’: মানবিক বিপর্যয়ের নয়া অধ্যায়

গাজা ও লেবাননে ইসরায়েলের ‘দাহিয়া ডকট্রিন’: মানবিক বিপর্যয়ের নয়া অধ্যায়

ইসরায়েলের সামরিক রণনীতি ‘দাহিয়া ডকট্রিন’ গাজা ও লেবাননে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। এই নীতির মাধ্যমে বেসামরিক স্থাপনা ও জনগণের ওপর অসম শক্তি প্রয়োগ করে শত্রুপক্ষকে দুর্বল করার কৌশল নিয়েছে ইসরায়েল। গাজার বর্তমান পরিস্থিতি জাতিসংঘের মতে নজিরবিহীন মানবিক বিপর্যয়ের উদাহরণ। লেবাননের দাহিয়া এলাকাও একই পরিণতির শিকার হয়েছে। আন্তর্জাতিক মহলে এই নীতি মানবাধিকার লঙ্ঘন হিসেবে তীব্র সমালোচিত।

1
ইসরায়েলি হামলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে ঘরবাড়ি। কোনো রকম তাঁবু টানিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন এক ফিলিস্তিনি নারী | ছবি: রয়টার্স

ইসরায়েলের সামরিক রণনীতি হিসেবে পরিচিত ‘দাহিয়া ডকট্রিন’ আবারও আলোচনায় এসেছে। এই নীতির আওতায় গাজা ও লেবাননে ইসরায়েল ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক মহল এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলো এটিকে মানবিকতার চরম লঙ্ঘন হিসেবে অভিহিত করেছে।

‘দাহিয়া ডকট্রিন’ কী?

‘দাহিয়া ডকট্রিন’ ইসরায়েলের সামরিক নীতি, যার মূল হলো বিপুল ও অসম শক্তি প্রয়োগ এবং বেসামরিক জনগণ ও স্থাপনায় ইচ্ছাকৃত হামলা। এই নীতির প্রবর্তক ইসরায়েলের তৎকালীন নর্দান কমান্ডের প্রধান জেনারেল গাদি আইজেনকট, যিনি ২০০৬ সালে লেবাননের দাহিয়া এলাকায় ইসরায়েলের হামলায় এই নীতি প্রয়োগ করেন। ওই হামলায় লেবাননের দাহিয়া এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় এবং এক হাজার বেসামরিক নাগরিক নিহত হন।

গাজায় দাহিয়া ডকট্রিনের প্রয়োগ

বর্তমান গাজা যুদ্ধেও ইসরায়েল একই নীতি অনুসরণ করছে। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ইসরায়েলের হামলায় গাজা কার্যত ধ্বংস হয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ৪৩ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের ৭০ শতাংশই নারী ও শিশু। আহত হয়েছেন এক লাখের বেশি। জাতিসংঘ বলছে, গাজার ধ্বংসপ্রাপ্ত অবকাঠামো পুনর্নির্মাণে ২০৪০ সাল পর্যন্ত সময় লাগবে।

লেবাননে দাহিয়া ডকট্রিনের পুনরাবৃত্তি

ইসরায়েল সম্প্রতি লেবাননে হিজবুল্লাহর ঘাঁটি বলে পরিচিত দাহিয়া এলাকায় আবারও এই নীতি প্রয়োগ করছে। ইতিমধ্যে বৈরুতের দক্ষিণাঞ্চল এবং লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে ইসরায়েল। হিজবুল্লাহর শীর্ষ নেতাদের হত্যার পাশাপাশি বেসামরিক স্থাপনায় নির্বিচার হামলা চালানো হচ্ছে।

ইসরায়েল কেন এই নীতি অনুসরণ করছে?

বিশ্লেষকদের মতে, ‘দাহিয়া ডকট্রিন’-এর মাধ্যমে ইসরায়েল শত্রুপক্ষকে দুর্বল করে দেওয়ার পাশাপাশি জনগণকে তাদের সরকার বা গোষ্ঠীর প্রতি সমর্থন প্রত্যাহারে বাধ্য করতে চায়। এর পাশাপাশি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও অবকাঠামো ধ্বংস করে প্রতিপক্ষকে পরনির্ভরশীল বানানো ইসরায়েলের অন্যতম লক্ষ্য।

মানবিক বিপর্যয় ও সমালোচনা

জাতিসংঘ ও অন্যান্য সংস্থার মতে, এই নীতি ইচ্ছাকৃতভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে এবং গাজা ও লেবাননে নজিরবিহীন মানবিক বিপর্যয়ের জন্ম দিয়েছে। জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন শাখার (আঙ্কটাড) মতে, গাজার অর্থনীতি প্রাক্-উন্নয়ন পর্যায়ে ফিরে গেছে এবং বর্তমান ধ্বংসযজ্ঞ থেকে বেরিয়ে আসতে কয়েক প্রজন্ম লেগে যাবে।

ইসরায়েলের এই একচেটিয়া রণনীতি এবং এর মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কৌশল নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে সমালোচনা ক্রমশ বাড়ছে। তবে ইসরায়েলের দাবি, এটি তাদের নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয়।

তথ্যসূত্র: আল-জাজিরা, দ্য গার্ডিয়ান, ওয়াশিংটন পোস্ট

নিউজ ডেস্ক

প্রভাত সময় ২৪