বিক্ষোভ মিছিল মোকাবিলা ও বিরোধী দল দমনে পুলিশের মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগকে মানবাধিকার লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচনা করে সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন ৭১.৫% মানুষ। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ বিভাগের ‘কেমন পুলিশ চাই’ শীর্ষক এক জনমত জরিপে এমন তথ্য উঠে এসেছে। জরিপটি পরিচালনা করেছে সম্প্রতি গঠিত পুলিশ সংস্কার কমিশন। আজ মঙ্গলবার জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা হয়। এই জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৮৯.৫% মানুষ মনে করেন, পুলিশকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার সম্পূর্ণ বন্ধ করা উচিত। ৭৮% মানুষ পুলিশের দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেন এবং ৭৫% মানুষ গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পুলিশের জবাবদিহি নিশ্চিত করার দাবি জানান।
গত ৮ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করেন নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। নতুন সরকার গঠনের পরপরই পুলিশের সংস্কার ও কার্যক্রম উন্নয়নে একটি কমিশন গঠন করা হয়। এই কমিশনের তত্ত্বাবধানে গত ৩১ অক্টোবর ‘কেমন পুলিশ চাই’ শীর্ষক জরিপের কার্যক্রম শুরু হয়। জরিপে অংশ নিয়েছেন ২৪ হাজার ৪৪২ জন। এর মধ্যে ৯৫% পুরুষ এবং মাত্র ৫% নারী। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৮৭% মানুষ ১৮ থেকে ৪৪ বছর বয়সী। জরিপটি মূলত পুলিশ প্রশাসনের দুর্বলতা, জনসাধারণের প্রত্যাশা এবং করণীয় নিয়ে তৈরি করা হয়।
জরিপের ফলাফলে উঠে এসেছে, ৯৫% মানুষ গায়েবি মামলার অপসংস্কৃতি দূর করার দাবি জানান। বিগত সরকারের আমলে বিরোধী দল দমন করতে গায়েবি মামলা ব্যবহারের অভিযোগ ছিল। এছাড়া, প্রায় ৮২.৫% উত্তরদাতা ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারাকে অপব্যবহারযোগ্য বলে উল্লেখ করেছেন। জরিপে ৯২% মানুষ পুলিশ হেফাজতে আসামি নির্যাতনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি তুলেছেন। পুলিশের মধ্যে দুর্নীতি প্রতিরোধের ওপর জোর দিয়েছেন ৭৮% মানুষ। ৫৯% উত্তরদাতা বলেছেন, পুলিশের কার্যক্রম তদারকির জন্য একটি স্বাধীন নিয়ন্ত্রণ কমিশন গঠন করা উচিত। এছাড়া, ৮৭% মানুষ তল্লাশি কার্যক্রমের সময় পুলিশ পরিচয় দিতে বাধ্য করার দাবি তুলেছেন।
পুলিশ সংস্কার কমিশন জানিয়েছে, জরিপের মাধ্যমে জনমতের একটি প্রাথমিক চিত্র পাওয়া গেছে। তবে সময়ের স্বল্পতার কারণে গবেষণাটি পূর্ণাঙ্গ করা সম্ভব হয়নি। কমিশনের চেয়ারম্যান বলেছেন, “পুলিশকে দুর্নীতিমুক্ত ও নিরপেক্ষ রাখতে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তাব দিচ্ছি। জরিপের ফলাফল ভবিষ্যতে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক হবে।” ‘কেমন পুলিশ চাই’ জরিপে জনগণের প্রত্যাশা স্পষ্ট। মানুষ এমন একটি পুলিশ বাহিনী চায় যা রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত, মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং জনগণের নিরাপত্তায় আন্তরিকভাবে কাজ করবে। জরিপে ওঠা তথ্যগুলো বাংলাদেশে পুলিশ প্রশাসনের উন্নয়ন এবং সংস্কারের জন্য নতুন দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করবে বলে মনে করা হচ্ছে।