• 23 Jan, 2025

গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার আহ্বান রাষ্ট্রপতির: স্বাধীনতার সুফল জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছানোর অঙ্গীকার

গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার আহ্বান রাষ্ট্রপতির: স্বাধীনতার সুফল জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছানোর অঙ্গীকার

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন স্বাধীনতার সুফল জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছানোর জন্য গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পরমতসহিষ্ণুতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের সংস্কৃতি গড়ে তোলার ওপর জোর দেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও একটি বৈষম্যহীন সমাজ গঠনে একসঙ্গে কাজ করার জন্য তিনি সবাইকে আহ্বান জানিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেছেন, লাখো শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার সুফল জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হবে। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে রোববার এক বাণীতে রাষ্ট্রপতি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, “স্বাধীনতার ৫২ বছরে আমরা অনেক সাফল্য অর্জন করেছি, কিন্তু এখনও অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার এবং মানবাধিকারের মতো বিষয়গুলো আরও শক্তিশালী করতে হবে। এ জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পরমতসহিষ্ণুতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে।” রাষ্ট্রপতি তাঁর বাণীতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে একটি শোষণমুক্ত ও বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, "বিজয়ের এই দিনে আমরা কেবল শহীদদের আত্মত্যাগকে স্মরণ করি না, বরং নিজেদের প্রতিজ্ঞাও নবায়ন করি। আমাদের সবার লক্ষ্য হওয়া উচিত, দেশ ও জাতিকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেওয়া। একটি উন্নত, সমৃদ্ধ এবং গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তোলাই আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য।"

স্বাধীনতার ইতিহাস ও শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা

রাষ্ট্রপতি বলেন, “১৬ ডিসেম্বর আমাদের মহান বিজয় দিবস। দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রাম ও ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে ১৯৭১ সালের এই দিনে আমরা অর্জন করেছি কাঙ্ক্ষিত বিজয়। আমরা পেয়েছি একটি সার্বভৌম দেশ, পবিত্র সংবিধান, নিজস্ব মানচিত্র ও লাল-সবুজ পতাকা। পেয়েছি স্বাধীন জাতি হিসেবে বিশ্বের বুকে নিজেদের পরিচিতি। বিজয়ের এই দিনে আমি দেশে ও প্রবাসে বসবাসরত সকল বাংলাদেশিকে বিজয়ের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই।” তিনি আরও বলেন, "এই দিনে আমরা গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করি মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী বীর শহীদদের। তাঁদের আত্মত্যাগের জন্যই আমরা আজ স্বাধীন বাংলাদেশে বাস করছি। আমি কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করছি সকল জাতীয় নেতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা, সম্ভ্রমহারা দুই লাখ মা-বোন, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও সমর্থক এবং বিদেশি বন্ধুদের। তাঁদের অবদান জাতি চিরকাল শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।"

অর্থনৈতিক মুক্তি ও উন্নয়নের পথে বাংলাদেশ

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, “স্বাধীনতার প্রধান লক্ষ্য ছিল রাজনৈতিক স্বাধীনতার পাশাপাশি বাঙালির অর্থনৈতিক মুক্তি নিশ্চিত করা। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের অর্থনীতি পুনর্গঠনের মাধ্যমে সে সংগ্রাম শুরু হয়েছিল। কিন্তু বিজয়ের পাঁচ দশক পেরিয়ে গেলেও জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি পুরোপুরি অর্জিত হয়নি। আমাদের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা বারবার বাধাগ্রস্ত হয়েছে। তবে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি কখনো থেমে যায়নি। আজ স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়নসহ আর্থসামাজিক উন্নয়নের বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশ বিশ্বে দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে।” তিনি আরও বলেন, "এ বছর জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতার গণ–অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বৈষম্যহীন ও দুর্নীতিমুক্ত একটি বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন এ দেশের মানুষ দেখেছে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এই স্বপ্ন অচিরেই বাস্তবায়িত হবে। বীরের দেশ বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠা পাবে।"

আন্তর্জাতিক ইস্যু ও শান্তির বার্তা

রাষ্ট্রপতি বলেন, “বাংলাদেশ বিশ্বশান্তিতে বিশ্বাসী। আলোচনার মাধ্যমে সকল সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানে আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ। ইসরায়েল কর্তৃক ফিলিস্তিন ও লেবাননের নিরীহ জনগণের ওপর হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। বাংলাদেশ ফিলিস্তিনি জনগণের ন্যায্য অধিকারের পক্ষে এবং যেকোনো মানবিক সমস্যার সমাধানে সবসময় পাশে থাকবে।” রোহিঙ্গা সংকট নিয়েও তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি কার্যকর ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, "বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের সম্মানজনক প্রত্যাবর্তন এবং এ সমস্যার স্থায়ী সমাধানে বিশ্ব সম্প্রদায়কে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।"

প্রবাসীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও আহ্বান

রাষ্ট্রপতি প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, "বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রবাসীদের অবদান অনস্বীকার্য। তাঁদের পাঠানো রেমিট্যান্স আমাদের জাতীয় অর্থনীতির মূল ভিত্তি হিসেবে কাজ করছে। আমি আশা করি, বিশ্বমন্দা ও অর্থনীতির এই ক্রান্তিকালে প্রবাসীরা রেমিট্যান্স প্রেরণ অব্যাহত রাখবেন এবং দেশের উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবেন।"

উপসংহার

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তাঁর বাণীর শেষে বলেন, "আসুন, মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সবাই মিলে একটি বৈষম্যহীন, উন্নত, সমৃদ্ধ এবং গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তুলি। মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য বাস্তবায়ন এবং শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠায় আমাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে আরও বেশি অবদান রাখতে হবে। বিজয়ের এই দিনে এটাই আমার প্রত্যাশা।"

নিউজ ডেস্ক

প্রভাত সময় ২৪