• 23 Jan, 2025

যশোরে আজহারীর মাহফিল ঘিরে ৩০০ জিডি, ভিড়ে আহত ২০

যশোরে আজহারীর মাহফিল ঘিরে ৩০০ জিডি, ভিড়ে আহত ২০

যশোরে ড. মিজানুর রহমান আজহারীর ওয়াজ মাহফিলে মোবাইল ফোন ও স্বর্ণালংকার হারানোর ঘটনায় ৩০০-এর বেশি জিডি করা হয়েছে। মাহফিলের ভিড়ের মধ্যে পদদলিত হয়ে অন্তত ২০ জন আহত হন। শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) রাতে পুলেরহাটে আদ-দ্বীন ফাউন্ডেশনের আয়োজন করা মাহফিলে প্রায় ১৫ লাখ মানুষের সমাগম ঘটে। নিরাপত্তার ঘাটতি ও ভিড়ের কারণে এসব ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

জনপ্রিয় ইসলামি বক্তা ড. মিজানুর রহমান আজহারীর ওয়াজ মাহফিলকে ঘিরে ব্যাপক বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়েছে। শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) রাতে যশোর শহরতলীর পুলেরহাট আদ-দ্বীন সকিনা মেডিকেল কলেজ চত্বরে অনুষ্ঠিত মাহফিলে মোবাইল ফোন, স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান জিনিস হারানোর ঘটনায় শনিবার বিকেল পর্যন্ত তিন শতাধিক সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। ভিড়ের মধ্যে পদদলিত ও ধাক্কাধাক্কিতে অন্তত ২০ জন আহত হন, যাদের মধ্যে ১১ জন যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। গত ১ জানুয়ারি থেকে ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী এই মাহফিলের আয়োজন করে আদ-দ্বীন ফাউন্ডেশন। মাহফিলের প্রথম দিন আলোচনা করেন আল্লামা মামুনুল হক ও আব্দুল হাই মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ। দ্বিতীয় দিন বক্তব্য দেন মাওলানা রফিকুল ইসলাম মাদানী ও মুফতি আমির হাজমা। শেষ দিন শুক্রবার বিকেলে বক্তব্য দেন শায়খ আহমাদুল্লাহ, আর রাতের সেশনে বক্তব্য দেন জনপ্রিয় ইসলামিক বক্তা ড. মিজানুর রহমান আজহারী।

azhari-jossor2-20250104200526
আজহারীর উপস্থিতির খবর পেয়ে দূর-দূরান্ত থেকে মুসল্লিরা মাহফিলে ছুটে আসেন। শুক্রবার সকাল থেকেই শীত উপেক্ষা করে মানুষ মাহফিল প্রাঙ্গণে সমবেত হতে শুরু করেন। বিকেল নাগাদ ভিড় এতটাই বেড়ে যায় যে, সড়ক-মহাসড়ক পর্যন্ত মানুষে ঠাসা হয়ে যায়। যানজটের কারণে অনেকে পায়ে হেঁটে মাহফিলে পৌঁছান। আয়োজকরা জানিয়েছেন, শুক্রবার রাতের মাহফিলে প্রায় ১৫ লাখ মানুষের সমাগম ঘটে। জনস্রোতের চাপে মাহফিল প্রাঙ্গণের বাইরে পর্যন্ত ভিড় ছড়িয়ে পড়ে। মাহফিলে ভিড়ের সুযোগ নিয়ে মোবাইল ফোন ও স্বর্ণালংকার চুরির ঘটনা ব্যাপকভাবে ঘটে। শুক্রবার গভীর রাত থেকে শনিবার বিকেল পর্যন্ত যশোর কোতোয়ালি মডেল থানায় ভুক্তভোগীরা জিডি করতে ভিড় জমান।

যশোর কোতোয়ালি থানার ডিউটি অফিসার শারমিন আক্তার জানান, “শুক্রবার রাত থেকে শনিবার দুপুর পর্যন্ত প্রায় ৩০০ সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হয়েছে। অনেকে তাদের হারানো মোবাইলের ডকুমেন্ট সঙ্গে আনতে না পারায় জিডি করতে পারেনি। জিডির সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আমরা ধারণা করছি।” মায়ের দেড় ভরি স্বর্ণের একটি গলার হার হারিয়ে থানায় জিডি করতে আসেন রূপদিয়ার বাসিন্দা ইব্রাহিম হোসেন। তিনি বলেন, “আমার মা মহিলা প্যান্ডেলে বসে আজহারী হুজুরের ওয়াজ শুনছিলেন। এক পর্যায়ে গলায় হাত দিয়ে দেখেন, গলার হার নেই। এভাবে চুরির ঘটনা খুবই দুঃখজনক।” শহরতলীর নওয়াপাড়ার বাসিন্দা হয়রত হোসেন বলেন, “আমার স্ত্রীর গলার চেইন চুরি হয়ে গেছে। এত বিশাল আয়োজনে আয়োজকদের আরও সতর্ক হওয়া উচিত ছিল। চুরির মতো অপরাধমূলক কাজ প্রতিরোধে আরও শক্ত ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।”

পদদলিত হয়ে আহত ২০, নিরাপত্তার ঘাটমাহফিলে ভিড়ের কারণে ধাক্কাধাক্কি ও পদদলনের ঘটনা ঘটে। এতে ২০ জন আহত হন, যাদের মধ্যে ১১ জন বর্তমানে যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আহতদের মধ্যে কয়েকজন শিশু ও বৃদ্ধও রয়েছেন। যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক বলেন, “এত বিশাল সমাগমে কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ চুরির অভিযোগগুলো তদন্ত করছে। সমাবেশস্থলে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হলেও লোকসংখ্যা অপ্রত্যাশিতভাবে বেড়ে যাওয়ায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ে।”

তিনি আরও বলেন, “যারা মূল্যবান জিনিস হারিয়েছেন, তারা থানায় জিডি করেছেন। কয়েকটি চুরির অভিযোগ পেয়েছি, বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।” বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এ ধরনের বিশাল আয়োজন পরিচালনায় আয়োজকদের আরও অভিজ্ঞতা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রয়োজন। পাশাপাশি, সমবেত মুসল্লিদেরও সতর্ক থাকা উচিত এবং ভিড়ের মধ্যে দামি জিনিস বহন এড়িয়ে চলা উচিত।

নিউজ ডেস্ক

প্রভাত সময় ২৪