• 23 Jan, 2025

ডিআইজি রফিকুল ইসলামের স্ত্রীর নামে জাহাজ, শ্বশুরসহ পরিবারের বিপুল সম্পদের চমকপ্রদ তথ্য

ডিআইজি রফিকুল ইসলামের স্ত্রীর নামে জাহাজ, শ্বশুরসহ পরিবারের বিপুল সম্পদের চমকপ্রদ তথ্য

অতিরিক্ত ডিআইজি রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে শত শত কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের অভিযোগ উঠেছে। স্ত্রীর নামে জাহাজ, বিদেশে স্বর্ণের ব্যবসা, ঢাকায় জমি ও ফ্ল্যাটসহ বিপুল সম্পদের তথ্য পেয়ে দুদক তার সম্পদ জব্দের নির্দেশ দিয়েছে। তার মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিয়ে রয়েছে গুরুতর বিতর্ক।

মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কোটায় ২০০১ সালে পুলিশে চাকরি নেওয়া অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ রফিকুল ইসলাম গত দুই দশকে জ্ঞাত আয়ের বাইরে শত শত কোটি টাকার সম্পদ গড়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রাথমিক তদন্তে তার এবং তার পরিবারের নামে জমি, ভবন, বিদেশি ব্যবসা ও অন্তত তিনটি জাহাজের মালিকানাসহ বিপুল সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। আদালত ইতোমধ্যে তার অবৈধ সম্পদ জব্দের নির্দেশ দিয়েছেন।

২০০১ সালের ৩১ মে ২০তম বিসিএসের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কোটায় এএসপি হিসেবে চাকরি পান রফিকুল ইসলাম। তবে তার বাবার মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিয়ে রয়েছে গুরুতর প্রশ্ন। জানা গেছে, রফিকুল ইসলাম পুলিশে যোগদানের আগে তার বাবা আব্দুর রাজ্জাক শেখ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত হননি। ২০০৫ সালে তার বাবার মুক্তিযোদ্ধা সনদ অন্তর্ভুক্ত করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, চাকরি পাওয়ার পর নিজের ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে মৃত বাবাকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভুক্ত করান তিনি।

দুদকের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, চাকরিতে যোগদানের পর থেকে রফিকুল ইসলাম ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজের এবং পরিবারের নামে বিপুল সম্পদ গড়েছেন। তার স্ত্রীর নামে রয়েছে একাধিক জমি ও ফ্ল্যাট।

রফিকুল ইসলামের স্ত্রী ফারজানা রহমানের নামে রয়েছে ‘এমভি সি কোয়েস্ট-৩’ নামের একটি জাহাজ। এছাড়া তার শ্বশুরের নামে রয়েছে আরও দুটি জাহাজ—‘এমভি সি কোয়েস্ট-১’ এবং ‘এমভি সি কোয়েস্ট-২’। এগুলোর রেজিস্ট্রেশন নম্বর যথাক্রমে এম-৭৫৪৪ ও এম-১২৯৮৩।

ফারজানা রহমানের নামে ১৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ব্যয়ে গুলশানে একটি বিলাসবহুল ফ্লোর রয়েছে। এছাড়া নিকুঞ্জে পাঁচ কাঠার একটি প্লট এবং ঝিলমিল প্রকল্পে ১০ কোটি টাকা মূল্যের দুটি প্লট কেনা হয়েছে।

গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার পাইককান্দি ইউনিয়নে সরকারি খাসজমি দখল করে দেড় একর জায়গার ওপর কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করেছেন একটি বিলাসবহুল বাড়ি। এ ছাড়া তার ভাই এবং শ্বশুরবাড়ির অন্যান্য সদস্যদের নামে রয়েছে বিপুল সম্পদ।

জানা গেছে, গোপালগঞ্জের সন্তান হওয়ায় রফিকুল ইসলাম সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েলের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। এই প্রভাববলয় কাজে লাগিয়ে তিনি দীর্ঘ সময় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জেলায় পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে বিদেশে অর্থ পাচার এবং দুবাইয়ে স্বর্ণের ব্যবসা পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে।

দুদকের অনুসন্ধানে এ পর্যন্ত শত শত কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। দুদক তার এই অবৈধ সম্পদ জব্দের জন্য আদালতে আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করেন।

“অতিরিক্ত ডিআইজি রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে দুর্নীতির গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। আমরা তার সম্পদের পূর্ণ তালিকা তৈরি করছি এবং তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ডিআইজি রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ এবং তার সম্পদের বিস্তার আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর ওপর জনগণের আস্থা প্রশ্নবিদ্ধ করছে। এ ব্যাপারে সঠিক তদন্ত ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হলে এ ধরনের দুর্নীতির বিরুদ্ধে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন হবে।

নিউজ ডেস্ক

প্রভাত সময় ২৪