• 23 Jan, 2025

বাংলাদেশ–ভারত টানাপোড়েনের মধ্যে ঢাকায় উচ্চপর্যায়ের কূটনৈতিক বৈঠক

বাংলাদেশ–ভারত টানাপোড়েনের মধ্যে ঢাকায় উচ্চপর্যায়ের কূটনৈতিক বৈঠক

বাংলাদেশ-ভারত কূটনৈতিক বৈঠক ঢাকায়।বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সাম্প্রতিক উত্তেজনার মধ্যে আগামী ৯ ডিসেম্বর ঢাকায় দুই দেশের পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। বৈঠকে সীমান্ত নিরাপত্তা, পানিবণ্টন এবং সম্পর্ক পুনঃস্থাপনসহ গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে আলোচনা হবে। এই বৈঠক দুই দেশের চলমান অস্বস্তি দূর করে সম্পর্কের নতুন অধ্যায় সূচনার সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় এই আলোচনা

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সাম্প্রতিক উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতির মধ্যে আগামী ৯ ডিসেম্বর ঢাকায় দুই দেশের পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। বাংলাদেশি পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিন এবং ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রের মধ্যকার এই বৈঠকটি দুই দেশের সম্পর্কের জটিলতা নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।

গত কয়েক মাসে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক টানাপোড়েনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা, সংখ্যালঘু নির্যাতন সংক্রান্ত অভিযোগ এবং সাম্প্রতিক কূটনৈতিক ঘটনাগুলোর প্রেক্ষিতে এই বৈঠকটি দুই দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

সম্পর্কের উত্তেজনার পটভূমি

গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঢাকা-দিল্লির মধ্যে একধরনের অস্বস্তি স্পষ্ট হতে শুরু করে। ক্ষমতা হারানোর পর শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নেন, যেখানে তিনি বিভিন্ন সময় বাংলাদেশের নতুন সরকারের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়েছেন। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বারবার দাবি করা হয়েছে, তাঁর অবস্থান এবং কার্যক্রম সম্পর্কে দিল্লি আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি।

ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নতুন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অভিনন্দন জানিয়ে তাঁর কাছে সংখ্যালঘু নিরাপত্তার বিষয়টি তুলে ধরেন। এরপর সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার শুরু হয়। এ প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েনের দাবিও তোলেন, যদিও তা ভারতের কংগ্রেস নেতা শশী থারুরের মতো অনেকেই সমালোচনা করেছেন।

উত্তেজনা আরও তীব্র হয় যখন আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে কিছু উগ্রপন্থী গোষ্ঠী হামলা চালায়। একই সঙ্গে কলকাতা ও মুম্বাইয়ের বাংলাদেশ মিশনের কাছে বিক্ষোভের ঘটনা ঘটে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনারকে তলব করে প্রতিবাদ জানায় এবং ভিসা সেবাসহ কনস্যুলার কার্যক্রম স্থগিত করে।

বৈঠকের গুরুত্ব ও সম্ভাব্য এজেন্ডা

উপমহাদেশের দুই শক্তিশালী প্রতিবেশীর এই বৈঠক কেবল একটি নিয়মিত কূটনৈতিক কার্যক্রম নয়; বরং এটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বাংলাদেশি পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিন বলেন, "এই বৈঠক ইতিহাসের এক জটিল সন্ধিক্ষণে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সম্পর্কের টানাপোড়েন দূর করার ক্ষেত্রে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।"

বৈঠকের আলোচনায় প্রাধান্য পেতে পারে বেশ কিছু বিষয়, যার মধ্যে রয়েছে:

  • সীমান্ত নিরাপত্তা: সাম্প্রতিককালে সীমান্তে উত্তেজনা ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে কিছু অপ্রীতিকর ঘটনার সমাধান।

  • পানিবণ্টন: গঙ্গা, তিস্তা ও অন্যান্য অভিন্ন নদীর পানিপ্রবাহ নিয়ে কারিগরি আলোচনা।

  • কনস্যুলার সেবা: সাম্প্রতিক হামলার কারণে স্থগিত হওয়া কনস্যুলার কার্যক্রম পুনরায় চালুর উপায়।

  • সম্পর্কের ভবিষ্যৎ: দুই দেশের মধ্যে আস্থার সম্পর্ক পুনঃস্থাপন।

পররাষ্ট্রসচিবদের এই বৈঠকের মাধ্যমে ঢাকা ও দিল্লির মধ্যে বন্ধ হয়ে যাওয়া আলোচনা প্রক্রিয়াগুলোও নতুন করে শুরু হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে বলে আশা করছেন বিশ্লেষকরা।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতা

বাংলাদেশ ও ভারতের এই সম্পর্কোন্নয়নে যুক্তরাষ্ট্রও সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। দক্ষিণ এশিয়ার স্থিতিশীলতা রক্ষায় ওয়াশিংটন ঢাকায় অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে। গত সেপ্টেম্বরে ঢাকায় সফরের আগে দিল্লিতে সফর করেছিলেন মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। তিনি ঢাকায় আলোচনার পর দিল্লিতে ভারতীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গেও এই বিষয়ে আলোচনা করেন।কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের এই ভূমিকা দুই দেশের মধ্যে ইতিবাচক সংলাপের পরিবেশ তৈরিতে সহায়ক হতে পারে।

বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক একটি জটিল এবং সংবেদনশীল সময়ে দাঁড়িয়ে। এই প্রেক্ষাপটে দুই দেশের পররাষ্ট্রসচিবদের আসন্ন বৈঠকটি শুধু কূটনৈতিক আলোচনার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ নয়, বরং এটি সম্পর্কের নতুন অধ্যায় শুরু করার একটি সুযোগ। বিশেষজ্ঞদের মতে, পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে সমস্যাগুলো সমাধান করতে পারলে দুই দেশের সম্পর্ক আরও গভীর এবং সুদৃঢ় হবে। তবে এই সম্পর্ক ঠিক কোন পথে এগিয়ে যাবে, তা নির্ভর করছে আসন্ন বৈঠকের সাফল্যের ওপর।

নিউজ ডেস্ক

প্রভাত সময় ২৪