• 23 Jan, 2025

কর্মস্থলে অনুপস্থিত থেকেও বেতন উত্তোলন ১৬ নার্সিং কর্মকর্তা

কর্মস্থলে অনুপস্থিত থেকেও বেতন উত্তোলন ১৬ নার্সিং কর্মকর্তা

সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৬ নার্সিং কর্মকর্তা কর্মস্থলে অনুপস্থিত থেকেও মাসের পর মাস বেতন তুলেছেন। এদের মধ্যে কেউ ২২ মাস পর্যন্ত বেতন ও বোনাস উত্তোলন করেছেন। বিষয়টি ধরা পড়ার পর নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর অভিযুক্তদের উত্তোলিত অর্থ ফেরত দিতে নির্দেশ দিয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করেছে এবং কয়েকজনকে বরখাস্ত করেছে।

সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নার্সিং কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গুরুতর প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, কর্মস্থলে না থেকেও মাসের পর মাস বেতন ও অন্যান্য ভাতা উত্তোলন করেছেন ১৬ জন নার্সিং কর্মকর্তা। এমনকি তাদের মধ্যে কেউ কেউ টানা ২২ মাস পর্যন্ত বেতন তোলার পরও কর্মস্থলে উপস্থিত ছিলেন না। এই ঘটনার পর হাসপাতালের প্রশাসন ও নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর উভয়ই নড়েচড়ে বসেছে।  

৮ জানুয়ারি নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর থেকে একটি নোটিশ জারি করা হয়। নোটিশে বলা হয়, এই ১৬ জন নার্সিং কর্মকর্তা প্রতারণার মাধ্যমে বেতন-ভাতা উত্তোলন করেছেন এবং তাদের এই অর্থ ফেরত দিতে হবে। অভিযুক্ত নার্সিং কর্মকর্তাদের তালিকায় আছেন সিনিয়র স্টাফ নার্স মো. ইউসুফ, মো. আব্দুর রহমান, লিপি রানী, আওলাদ হোসেন মাসুম, জাহেদ আহমদ, এম এফ কে জান্নাত, একরামুল হক, রুনা, কামরুন্নাহার, ঝিলি ধর, মোহাম্মদ আলী আশরাফ, মো. শাহিন মিয়া, শামীমা জান্নাত, জান্নাতুল ফেরদাউস, মোছা. শিরীন সুলতানা ও লাভলী বেগম।

এর মধ্যে সর্বোচ্চ সময় ধরে প্রতারণা করেছেন এম এফ কে জান্নাত। তিনি ২২ মাসের বেতন এবং ৬টি বোনাস উত্তোলন করেছেন। হাসপাতালের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, অভিযুক্তদের মধ্যে বেশিরভাগই বর্তমানে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। হাসপাতালের অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ওসমানী হাসপাতালের ৪৩ জন নার্সিং কর্মকর্তা কর্মস্থলে নেই। এদের মধ্যে কেউ কেউ দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে অনুপস্থিত। তবে এই ৪৩ জনের মধ্যে ১৬ জন কৌশলে বেতন উত্তোলন করেছেন, যা বড় ধরনের প্রতারণার শামিল।

এ বিষয়ে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. ওমর রাশেদ মুনীর বলেন, “কয়েকজন নার্সিং কর্মকর্তার ব্যাপারে এ ধরনের খবর আমাদের কাছে এসেছে। ইতোমধ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কয়েকজনকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তদন্ত শেষে সুনির্দিষ্ট প্রমাণের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে, অভিযুক্তদের প্রতারণার মাধ্যমে উত্তোলন করা বেতন-ভাতার অর্থ অবিলম্বে ফেরত দিতে হবে। একই সঙ্গে তদন্ত কমিটি এসব নার্সিং কর্মকর্তার অনুপস্থিতির কারণ, দায়িত্বে অবহেলার প্রকৃতি এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা রোধে প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রণয়ন করবে।  

এই ঘটনার পর সিলেটের চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত মহলে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একটি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি হাসপাতালের এমন ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক এবং সুশাসনের অভাবের প্রতিফলন। তারা মনে করেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের আরও কঠোর নজরদারি এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। হাসপাতাল প্রশাসন এবং নার্সিং অধিদপ্তর জানিয়েছে, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং এই ঘটনায় জড়িতদের কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। একই সঙ্গে, ভবিষ্যতে এ ধরনের প্রতারণা রোধে কঠোর নিয়ম প্রণয়ন এবং উপস্থিতির বিষয়ে আরও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের পরিকল্পনা করছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

নিউজ ডেস্ক

প্রভাত সময় ২৪