• 23 Jan, 2025

অনাগত সন্তানের মুখ দেখার আগেই জীবন হারালেন অ্যাডভোকেট সাইফুল

অনাগত সন্তানের মুখ দেখার আগেই জীবন হারালেন অ্যাডভোকেট সাইফুল

চট্টগ্রামে সংঘর্ষের সময় নিহত হয়েছেন সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফ (৩৫)। তিন বছরের কন্যাসন্তান ও অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী রেখে তার মৃত্যু পরিবারে শোকের ছায়া নেমে এনেছে। পরিবার ও সহকর্মীরা হত্যার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছেন।

চট্টগ্রাম আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফ (৩৫) মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) সংঘর্ষের এক মর্মান্তিক ঘটনায় নিহত হয়েছেন। তিনি স্ত্রী, তিন বছর বয়সী কন্যাসন্তান এবং চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে রেখে গেছেন। সাজানো-গোছানো সংসারে দ্বিতীয় সন্তানের অপেক্ষায় থাকা এই পরিবারের স্বপ্ন ভেঙে গেল এক হৃদয়বিদারক দুর্ঘটনায়।

সাইফুলের বড় বোন জান্নাত আরা বেগম গণমাধ্যমে বলেন, “আমার ছোট ভাইয়ের তিন বছরের মেয়ে আছে। এখন সে বাবাহীন হয়ে গেল। তার অনাগত সন্তানও বাবার মুখ দেখতে পারবে না। আমার ভাইয়ের মতো নিরপরাধ মানুষকে কেন হত্যা করা হলো? আমরা এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।” নিহত সাইফুলের পিতা জামাল উদ্দিন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “আমি আমার ছেলের হত্যার বিচার চাই। যারা এমন পাশবিকভাবে আমার ছেলেকে মেরেছে, আমি আল্লাহর কাছে তাদের বিচার দিলাম।” মঙ্গলবার জাতীয় পতাকার অবমাননার অভিযোগে দায়ের করা রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে কারাগারে নেওয়া হচ্ছিল। এ সময় চট্টগ্রাম আদালত চত্বরে ইসকনের সমর্থকরা তার মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করে।

বিক্ষোভ চলাকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এবং সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শী মো. হাসান নামে এক আইনজীবী জানান, সংঘর্ষের সময় আইনজীবী সাইফুল আলিফকে বিক্ষোভকারীরা আক্রমণ করে এবং ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করে। সংঘর্ষে গুরুতর আহত সাইফুলকে দ্রুত উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় আরও অন্তত ১৯ জন আহত হন। তাদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আব্দুল মন্নান জানান, “আহতদের কেউ মাথায় আঘাত পেয়েছেন, কেউ হাতে বা শরীরের অন্যান্য জায়গায়। তাদের মধ্যে সবাই এখন আশঙ্কামুক্ত। হাসপাতালে ভর্তি আহতরা আমাদের বিভিন্ন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন আছেন।”

চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার আমিরাবাদ এলাকায় সাইফুলের বাড়ি। সাত ভাই-বোনের মধ্যে তিনি চতুর্থ। সদ্য নিয়োগ পাওয়া সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর সাইফুল আইন পেশায় সুনামের সঙ্গে কাজ করছিলেন। তাঁর স্ত্রী ইসরাত জাহান তারিন এখন চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা। তাদের সংসার সাজানো-গোছানো হলেও এই দুর্ঘটনা সবকিছু তছনছ করে দিয়েছে। সাইফুলের পরিবার ও সহকর্মীরা দ্রুত এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছেন। পরিবার বলছে, নিরপরাধ সাইফুলকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। তার স্বপ্ন, সন্তান ও সাজানো সংসার সবকিছু মুছে গেল একটি নিষ্ঠুর ঘটনার ফলে। চট্টগ্রামে সম্প্রতি ধর্মীয় ও রাজনৈতিক ইস্যু নিয়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে। জাতীয় পতাকার অবমাননা ইস্যুতে আদালত চত্বরে সংঘর্ষের ঘটনাকে কেন্দ্র করে আরও সহিংসতা এড়াতে প্রশাসন সতর্ক অবস্থান নিয়েছে।

সাইফুলের পরিবার ও আইনজীবী সমাজ এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চেয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছে। তারা আশা প্রকাশ করেছেন যে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।

নিউজ ডেস্ক

প্রভাত সময় ২৪