• 23 Jan, 2025

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল: নতুন বিচারের পথে সরকার, আইসিটি আইনে আসছে সংশোধনী

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল: নতুন বিচারের পথে সরকার, আইসিটি আইনে আসছে সংশোধনী

বাংলাদেশ সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে সংশোধনী আনার উদ্যোগ নিয়েছে। লক্ষ্য, বিচারপ্রক্রিয়াকে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে খাপ খাইয়ে আরও স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য করা। নতুন বিচার প্রক্রিয়ায় জুলাই-আগস্টে সহিংসতায় নিহত শত শত বিক্ষোভকারীর হত্যাকাণ্ডের বিচার হবে। প্রচুর সাক্ষ্যপ্রমাণ থাকা সত্ত্বেও রাজনৈতিক চাপ ও আইনি চ্যালেঞ্জ নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) আইনের সংশোধনী নিয়ে নতুন উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। লক্ষ্য, আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বিচারপ্রক্রিয়ার বিশ্বাসযোগ্যতা নিশ্চিত করা। মাত্র ১০ বছর আগের যুদ্ধাপরাধের বিচার আজও দেশ ও বিশ্বে আলোচিত। তবে এবার বিচারকার্য সম্পূর্ণ নতুন পটভূমিতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, যা আইসিটি আইনের গুরুত্ব আরও বাড়িয়ে তুলেছে। ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন অনুসারে আওয়ামী লীগ সরকার ২০১০ সালে যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু করে। জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে শুরু হওয়া এই বিচার প্রক্রিয়া জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচিত হয়। যদিও বিচারপ্রক্রিয়া জনগণের মধ্যে ব্যাপক সমর্থন পেয়েছিল, এর যথাযথতা নিয়ে তুমুল বিতর্ক ছিল। নিলসনের ২০১৩ সালের জরিপ অনুযায়ী, বিচার চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে ৮৬ শতাংশ মানুষ সমর্থন জানালেও ৬৩ শতাংশ মানুষ এটি অন্যায্য বলে মত দিয়েছিলেন। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কর্মকাণ্ড এবং সাক্ষ্যপ্রমাণ সংগ্রহের ত্রুটি বিচারপ্রক্রিয়ার ন্যায্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছিল। 
২০২৪ সালে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সাম্প্রতিক কার্যক্রম ঘিরে নতুন বিচার শুরুর ঘোষণা এসেছে। জুলাই-আগস্ট মাসে সহিংসতায় শত শত বিক্ষোভকারী নিহত হওয়ার ঘটনাগুলো এই বিচারের কেন্দ্রে থাকবে। তবে নতুন বিচারের ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ ও ডিজিটাল সাক্ষ্যপ্রমাণের আধিক্য প্রসিকিউটরদের কাজকে সহজ করবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবুও চ্যালেঞ্জ অস্বীকার করা যাচ্ছে না। আন্তর্জাতিক অপরাধের ক্ষেত্রে চেইন অব কমান্ড এবং রাষ্ট্রীয় নীতির প্রমাণসহ অপরাধীদের সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের যোগসূত্র স্থাপন করা কঠিন হতে পারে। এর পাশাপাশি, প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের বিচার একটি স্পর্শকাতর ইস্যু, যা আন্তর্জাতিক নজরদারি ও সমালোচনার মুখে পড়তে পারে।


সরকার ১৯৭৩ সালের আইনে রোম সংবিধির মৌলিক নীতিগুলো অন্তর্ভুক্ত করার কথা ভাবছে। এই সংবিধি অনুসারে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত পরিচালিত হয়। যদিও সংশোধনী কতটা কার্যকর হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। বিশ্ব সম্প্রদায়ের বিশ্বাস অর্জনে বিচার প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, নতুন বিচারগুলোতে কোনো ধরনের অন্যায় বা পক্ষপাতের সুযোগ রাখলে তা সরকারের জন্য প্রতিকূল হতে পারে। এই বিচার ঘিরে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ থাকবে। ভারতের মতো প্রতিবেশী দেশের পাশাপাশি প্রবাসী রাজনৈতিক মহলও এই প্রক্রিয়ার ওপর নজর রাখবে। ফলে আইনের দুর্বলতা বা বিচারের ত্রুটি আন্তর্জাতিক সমালোচনার সুযোগ তৈরি করতে পারে। তাই সরকারকে দ্রুত ও সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সংশোধনী কার্যকর হলে এটি শুধু নতুন বিচার প্রক্রিয়াকেই নয়, বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তিকেও শক্তিশালী করবে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের নতুন বিচার বাংলাদেশের আইনি ব্যবস্থার জন্য একটি বড় পরীক্ষা। আইনের আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করাই সরকারের প্রধান চ্যালেঞ্জ। ব্যর্থতার কোনো সুযোগ নেই—এ কথা বলাই যথেষ্ট নয়, এটি বাস্তবায়ন করাই এখন জরুরি।

নিউজ ডেস্ক

প্রভাত সময় ২৪