• 23 Jan, 2025

দেশের উন্নয়ন ও স্বাধীনতা রক্ষায় সতর্ক থাকার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

দেশের উন্নয়ন ও স্বাধীনতা রক্ষায় সতর্ক থাকার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে পরাজিত শক্তির ষড়যন্ত্র থেকে মুক্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের সাফল্য এবং প্রবাসীদের কল্যাণে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরেন।

অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিন পূর্তি উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশবাসীর প্রতি পরাজিত শক্তির ষড়যন্ত্র থেকে মুক্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। রোববার (১৭ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৭টায় প্রচারিত এই ভাষণে তিনি সরকারের বিভিন্ন সাফল্য তুলে ধরেন এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অর্জিত সুনাম রক্ষা করতে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।

ড. ইউনূস বলেন, “বিশ্বের রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে বাংলাদেশ আজ সম্মানিত অবস্থানে রয়েছে। অথচ পরাজিত শক্তি নানা ষড়যন্ত্র করে জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছে। তাদের এসব চক্রান্ত নস্যাৎ করতে দেশবাসীকে সজাগ থাকতে হবে। এ দেশকে আর কোনো ষড়যন্ত্রের শিকার হতে দেওয়া যাবে না।”

প্রধান উপদেষ্টা অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার ব্যাপারে সরকারের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, “সকল সীমাবদ্ধতার পরেও আমরা এমন একটি অর্থনীতি তৈরি করছি, যা ভবিষ্যতে আমাদের চলার পথকে সহজ করবে। পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। আন্তর্জাতিক সহযোগিতা নিয়ে এ কাজ এগিয়ে চলছে।”

তিনি আরও জানান, গত কয়েক বছরে আগের সরকার প্রতি বছর ১২-১৫ বিলিয়ন ডলার পাচার করেছে। দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের তথ্যের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, “যে অর্থ পাচার হয়েছে, তা ফিরিয়ে আনতে আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলোর সহযোগিতা নেওয়া হচ্ছে। এ অর্থ ফেরত আসলে অর্থনীতিতে নতুন গতি সঞ্চার হবে।”

ড. ইউনূস আন্তর্জাতিক মঞ্চে বাংলাদেশের অবস্থানের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, “জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ অধিবেশনে অংশগ্রহণকালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কানাডা, ইতালি, হল্যান্ড, ও জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। তারা আমাদের প্রতি সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদানের অঙ্গীকার করেছেন। এ ছাড়া প্রতিবেশী দেশ নেপাল, মালদ্বীপ, পাকিস্তানসহ সার্ক পুনরুজ্জীবিত করার ব্যাপারে আলোচনা করেছি।”

তিনি জানান, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭ রাষ্ট্রদূত এবং বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা সহযোগিতা বৃদ্ধির প্রস্তাব নিয়ে ঢাকায় আসছেন। এটি বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক সম্পর্ককে আরও সুসংহত করবে।

প্রবাসী বাংলাদেশিদের কল্যাণে নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে ড. ইউনূস বলেন, “মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম ১৮ হাজার বাংলাদেশি শ্রমিকের জন্য মালয়েশিয়ার দরজা পুনরায় উন্মুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এ নিয়ে আমরা কাজ শুরু করেছি। সংযুক্ত আরব আমিরাত ইতোমধ্যে সাজাপ্রাপ্ত ৫৭ জন বাংলাদেশিকে মুক্তি দিয়েছে। প্রবাসীদের কল্যাণে আমরা সম্ভাব্য সব ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছি।”

ড. ইউনূস আরও জানান, সৌদি আরব, রাশিয়া, তুরস্ক, সিঙ্গাপুর, ব্রাজিলসহ বিভিন্ন দেশের নেতৃবৃন্দ বাংলাদেশের প্রতি সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। বিশেষ করে তুরস্ক বাংলাদেশের সঙ্গে বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও বাণিজ্য সম্পর্ক জোরদারে একটি নতুন ইনভেস্টমেন্ট অফিস স্থাপনের ঘোষণা দিয়েছে।

জাতীয় স্বাধীনতা ও উন্নয়ন রক্ষায় ষড়যন্ত্র মোকাবিলার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “বিপক্ষ শক্তি নাশকতা ও ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তাদের চক্রান্ত নস্যাৎ করার জন্য দেশবাসীকে সতর্ক থাকতে হবে। এবার যে মুক্তি আমরা অর্জন করেছি, তা যেন কেউ ছিনিয়ে নিতে না পারে। এ জন্য সবসময় প্রস্তুত থাকতে হবে।”

ড. ইউনূস তার ভাষণের শেষাংশে দেশবাসীর উদ্দেশে বলেন, “আমরা আপনাদের মজবুত অর্থনীতি, নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি। আপনারা আমাদের ওপর আস্থা রাখুন এবং কোনো ষড়যন্ত্রকে উৎসাহিত করবেন না। পরাজিত শক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকুন এবং দেশের অগ্রগতি রক্ষায় ভূমিকা রাখুন।”

জাতীয় উন্নয়ন ও স্বাধীনতা রক্ষায় ষড়যন্ত্র মোকাবিলার জন্য দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি আন্তর্জাতিক মঞ্চে বাংলাদেশের অবস্থান, প্রবাসীদের কল্যাণ, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, ও পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন।

নিউজ ডেস্ক

প্রভাত সময় ২৪