
গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে সতর্ক করে বলেছেন, জনগণের আস্থা অর্জনে ব্যর্থ হলে এবং দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে না আনলে সরকারকে ক্ষমতা ছেড়ে যেতে হবে। জনগণের দুর্দশার প্রতি অমানবিক মনোভাব প্রদর্শন করলে সরকারের গদি যে কোনো মুহূর্তে নড়বড়ে হয়ে পড়তে পারে বলে তিনি হুঁশিয়ারি দেন।
শনিবার সন্ধ্যায় নেত্রকোনার মোক্তারপাড়া মাঠে তারুণ্যের সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে নুরুল হক নুর এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ ছাত্র, যুব ও পেশাজীবী অধিকার পরিষদের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এই সমাবেশে নুর তাঁর বক্তব্যে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির কারণে জনগণের ক্রয়ক্ষমতা যে প্রায়শই ক্ষীণ হয়ে আসছে, তা উল্লেখ করে বলেন, ‘‘অন্তর্বর্তী সরকার যদি জনসম্পৃক্ত না হয় এবং দ্রব্যমূল্য জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে না থাকে, তবে ঠুস করে তাদের গদি পড়ে যাবে। এক-এগারোর মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে, যা রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর।’’
তিনি বলেন, ‘‘দ্রব্যমূল্য এতটাই অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে চলেছে যে, জনগণের জীবনযাত্রা ক্রমেই দুর্বিষহ হয়ে উঠছে। তাদের আর্থিক অবস্থার ক্রমাবনতি ঘটছে। সড়ক ও নৌপথ ধরে চাঁদাবাজি, দখলবাজি অব্যাহত রয়েছে, যা জনগণের ভোগান্তিকে আরও বাড়িয়ে তুলছে। চাঁদাবাজি বন্ধ না হলে এবং জনগণের দুঃখ-দুর্দশার অবসান না ঘটালে জনগণই এক সময় গণ–অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেবে।’’
আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে নুর বলেন, ‘‘আপনাদের নেত্রী শেখ হাসিনা অনেক কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে দলকে প্রায় মৃত অবস্থায় রেখে গেছেন। আপনাদের জন্য এটাই ভালো হবে যে, আস্ফালন না করে জনগণের দাবি মেনে নিন। যে কেউ আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনে চেষ্টা করবে, তাদের সমুচিত জবাব দিতে ছাত্র-জনতা প্রস্তুত রয়েছে।’’
তারুণ্যের সমাবেশে নুরুল হক নুর তরুণদের আহ্বান জানান নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন গড়তে। ‘‘আমরা তরুণদের নিয়ে এক নতুন বাংলাদেশ গড়তে চাই। গণ অধিকার পরিষদ কোনো চাঁদাবাজি বা দখলবাজিতে লিপ্ত নয়। সুতরাং গণ অধিকার পরিষদের পতাকাতলে এসে তরুণরা নতুন শক্তি সঞ্চয় করতে পারে। একটি সমৃদ্ধ, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে,’’—নুরুল হক নুর তাঁর বক্তব্যে বলেন।
নুরুল হক আরও বলেন, ‘‘আমরা সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের দাবি জানাই। তদ্ব্যতীত, সংসদের মেয়াদ আমেরিকার মতো চার বছর করার প্রস্তাব রাখছি, যাতে আরও শক্তিশালী ও কার্যকর একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশ গড়ে ওঠে।’’
এই সমাবেশে আরও বক্তৃতা করেন গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান। তিনি বলেন, ‘‘বর্তমান সরকারের ব্যর্থতা, দুর্নীতি ও ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য চাঁদাবাজি এবং অবৈধ কার্যক্রমের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের বিকল্প কোনো পথ নেই।’’ নুর তাঁর বক্তব্যে উল্লেখ করেন, ‘‘গণ–অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জনগণ এই ফ্যাসিবাদী শক্তিকে পরাজিত করতে প্রস্তুত। সরকারের চাপে জনগণের মুখোমুখি হতে হবে। ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও তাদের অপশাসন জনগণের মনে ঘৃণার সৃষ্টি করছে।’’
সভাপতির বক্তব্যে হাসান আল মামুন বলেন, ‘‘আমার নিজ জেলা নেত্রকোনায় শেখ হাসিনার নামে যে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তার নাম পরিবর্তন করে নেত্রকোনার কৃতী সন্তান হুমায়ূন আহমেদের নামে করার দাবি জানাচ্ছি।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম যদি হুমায়ূন আহমেদের নামে করা হয়, তবে এটি হবে তাঁর প্রতি সম্মান প্রদর্শনের একটি অনন্য নিদর্শন।’’
এই সমাবেশে গণ অধিকার পরিষদের তরুণ নেতারা নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের উদ্দেশ্যে একটি শক্তিশালী গণ–অধিকার আন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষ্যে নিজেদের প্রস্তুতি জানান। তরুণদের মধ্যে একধরনের আত্মবিশ্বাস লক্ষ্য করা যায়, যা দেশকে একটি স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে রূপান্তরিত করার প্রত্যয়ে উদ্বুদ্ধ করেছে। গণ অধিকার পরিষদের নেতারা তাদের বক্তৃতায় জনগণের পক্ষ নিয়ে নির্যাতন, চাঁদাবাজি, এবং জনগণের প্রতি অমানবিক আচরণের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান জানান।
গণ অধিকার পরিষদের প্রতীক ট্রাক উল্লেখ করে নুর বলেন, ‘‘নির্বাচনে জনগণ গণ অধিকার পরিষদের প্রার্থীকে ভোট দিলে একটি কার্যকর পরিবর্তনের দিকে বাংলাদেশ অগ্রসর হবে। দেশের জন্য নিবেদিত, সৎ, এবং নিষ্ঠাবান নেতৃত্বের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। আমরা কোনো চাঁদাবাজি কিংবা অনৈতিক কার্যক্রমে লিপ্ত নই, বরং দেশের জনগণের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করে যেতে চাই।’’
তারুণ্যের এই সমাবেশের মাধ্যমে গণ অধিকার পরিষদের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা একটি নতুন রাজনৈতিক ধারার দিকে এগিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেন, যা বর্তমান শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটিয়ে দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবে বলে তাঁরা আশাবাদ ব্যক্ত করেন।