• 23 Jan, 2025

রাজউকের প্লট দুর্নীতিতে শেখ রেহানাসহ ৩ সন্তানের বিরুদ্ধে মামলা, সহযোগী শেখ হাসিনা

রাজউকের প্লট দুর্নীতিতে শেখ রেহানাসহ ৩ সন্তানের বিরুদ্ধে মামলা, সহযোগী শেখ হাসিনা

রাজউকের প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা ও পরিবারের আরও সদস্যদের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা দায়ের করেছে দুদক। মামলায় ক্ষমতার অপব্যবহার, সম্পদ পাচার ও প্লট বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগ আনা হয়েছে।

রাজউকের প্লট বরাদ্দ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা ও পরিবারের আরও সদস্যদের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সোমবার (১৩ জানুয়ারি) দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে পৃথকভাবে এই মামলাগুলো দায়ের করা হয়। দুদক মহাপরিচালক মো. আখতার হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। মামলায় শেখ রেহানা, তার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি এবং মেয়ে আজমিনা সিদ্দিককে প্রধান আসামি করা হয়েছে। এছাড়া শেখ হাসিনার মেয়ে টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সহযোগী আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। প্রতিটি মামলায় ১২ থেকে ১৩ জন আসামি রয়েছে।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে সরকারি বিশেষ ক্ষমতাবলে তার পরিবারের সদস্যদের জন্য পূর্বাচল আবাসন প্রকল্পে প্লট বরাদ্দ দেন। বরাদ্দের এই প্রক্রিয়া চলাকালীন সময়ে রাজউক ও সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের যোগসাজশে অসৎ উদ্দেশ্যে এই বরাদ্দ দেওয়া হয়। অভিযোগে আরও বলা হয়, পূর্বাচলের ২৭ নম্বর সেক্টরের ২০৩ নম্বর রাস্তায় ১০ কাঠা করে মোট ৬০ কাঠার ছয়টি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর মধ্যে শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, বোন শেখ রেহানা এবং শেখ রেহানার দুই সন্তান রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি ও আজমিনা সিদ্দিকের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়।

গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর দুদক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে প্লট বরাদ্দে দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়। একই সঙ্গে বিভিন্ন প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগও তদন্তের আওতায় আনা হয়। দুদকের অভিযোগ অনুসারে, শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যরা শুধু রাজউকের প্লট বরাদ্দ নয়, বরং রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প এবং অন্যান্য মেগা প্রকল্পেও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। এসব প্রকল্প থেকে বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগের বিষয়ে গত ২২ ডিসেম্বর দুদক তদন্ত শুরুর সিদ্ধান্ত নেয়।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন। এরপর থেকে তিনি ভারতে অবস্থান করছেন। তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের আওতায় আনতে সরকারের পক্ষ থেকে দিল্লিতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তবে এ বিষয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানায়নি নরেন্দ্র মোদি সরকার। এদিকে, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ ও অর্থপাচারের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। তার পাসপোর্ট বাতিল করা হয়েছে এবং তাকে দেশে ফেরত আনার বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

অভিযোগের বিষয়ে শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় যুক্তরাষ্ট্র থেকে এক বিবৃতিতে বলেন, "দুর্নীতির অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। এটি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার একটি অংশ।" তিনি দুদককে চ্যালেঞ্জ করে এ অভিযোগের প্রমাণ দিতে বলেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে মামলাগুলো বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একটি বড় পদক্ষেপ। দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড নিয়ে জনমনে অসন্তোষ বাড়ছিল। এসব মামলার মাধ্যমে সরকারের দুর্নীতির বিষয়গুলো প্রকাশ্যে আসছে।

নিউজ ডেস্ক

প্রভাত সময় ২৪