• 23 Jan, 2025

সংবিধান সংস্কারে জনআকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন: অংশীজনদের সুপারিশ

সংবিধান সংস্কারে জনআকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন: অংশীজনদের সুপারিশ

জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে সংবিধানে প্রতিফলিত করার আহ্বান জানিয়ে সংবিধান সংস্কার কমিশনের সঙ্গে মতবিনিময় করেছে বিভিন্ন পেশাজীবী, গবেষক, এবং মানবাধিকার কর্মীরা। অংশগ্রহণকারীরা সংবিধান পুনর্লিখন ও সংস্কারের নানা প্রস্তাব তুলে ধরেন। বিশেষ করে সংবিধানে নারীর অধিকারের প্রসার, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সুরক্ষা, এবং গণতান্ত্রিক কাঠামো আরও শক্তিশালী করার ওপর জোর দেওয়া হয়।

গণ–অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জনগণের যে আকাঙ্ক্ষার বিস্ফোরণ ঘটেছে, তা সংবিধানে প্রতিফলিত করার আহ্বান জানিয়েছেন বিভিন্ন পেশাজীবী, মানবাধিকারকর্মী এবং গবেষকরা। গতকাল রোববার সংবিধান সংস্কার কমিশনের আয়োজনে একাধিক মতবিনিময় সভায় এই আহ্বান উঠে আসে। অধ্যাপক আলী রীয়াজের নেতৃত্বাধীন সংবিধান সংস্কার কমিশন ইতিমধ্যে অংশীজনদের সঙ্গে ধারাবাহিক মতবিনিময়ের মাধ্যমে তাদের সুপারিশ গ্রহণ করছে।

সংবিধান সংস্কার কমিশনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, গতকাল বিকেলে অনুষ্ঠিত সভাগুলোর মধ্যে অংশ নেন মানবাধিকারকর্মী ইলিরা দেওয়ান, গবেষক মাহা মির্জা, সংস্কৃতিকর্মী সারোয়ার তুষার, সাইয়েদ আবদুল্লাহ, এবং আইনজীবী আরিফ খানসহ আরও অনেকে। অংশগ্রহণকারীরা সংবিধান সংস্কারের প্রয়োজনীয় দিকগুলো তুলে ধরেন, অনেকেই সংবিধানের বর্তমান কাঠামোতে সংস্কারের পাশাপাশি নতুন সংবিধান প্রণয়নের দাবি জানিয়েছেন। গবেষক মাহা মির্জা বলেছেন, কৃষক ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকার রক্ষায় সংবিধানে তাদের ভূমির মালিকানা ও রুটিরুজির নিশ্চয়তা প্রদান জরুরি। তিনি কর্মসংস্থান, সম্পত্তির অধিকার এবং জনস্বার্থের দোহাই দিয়ে সরকারের জমি অধিগ্রহণের ক্ষমতা সীমিত করার প্রস্তাব দিয়েছেন।তরুণ চিন্তাবিদ সারোয়ার তুষার বিদ্যমান সংবিধান পরিবর্তে নতুন গণতান্ত্রিক সংবিধান রচনার পক্ষে যুক্তি দিয়েছেন। তিনি প্রোক্লেমেশন অব সেকেন্ড রিপাবলিক ঘোষণা, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা খর্ব করা এবং অভিসংশনের বিধান সংযোজনের প্রস্তাব করেন। মানবাধিকারকর্মী ইলিরা দেওয়ান সংবিধানের ৩ নম্বর ধারায় ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা’র পাশাপাশি ৫০টি জাতিসত্তার মাতৃভাষার স্বীকৃতি ও সংরক্ষণ চেয়েছেন। তিনি সংবিধানের ৬ অনুচ্ছেদে ‘বাঙালি’ পরিচয়ের পরিবর্তে ‘বাংলাদেশি’ শব্দ ব্যবহারের সুপারিশ করেন। মতবিনিময়ে অংশগ্রহণকারীরা সংবিধান সংশোধনের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়েও আলোচনা করেন। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, “বর্তমান সংবিধানের আলোকে সরকার পরিচালিত হচ্ছে। গণপরিষদ গঠন বা নতুন সংবিধান রচনার বিষয়টি জটিলতা তৈরি করতে পারে।”তিনি আরও বলেন, “নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসনের বিধান তুলে দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্দিষ্টসংখ্যক নারী প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার বাধ্যবাধকতা সংবিধানে যুক্ত করা উচিত।”  
গবেষক ও লেখকরা বলেন, সংবিধানে জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মানবাধিকার, গণতন্ত্রের সুরক্ষা, এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় জবাবদিহিতার বিধান সংবিধানে সুস্পষ্টভাবে থাকতে হবে।সংবিধান সংস্কার কমিশনের এই উদ্যোগকে অংশীজনরা স্বাগত জানিয়েছেন। তবে প্রস্তাব বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া নিয়ে সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনার আহ্বান জানিয়েছেন অনেকে। প্রস্তাবিত সংবিধান সংস্কারের মাধ্যমে বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের ভিত্তি আরও দৃঢ় হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

নিউজ ডেস্ক

প্রভাত সময় ২৪