• 23 Jan, 2025

ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির অভিযোগে ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু গ্রেপ্তার, ৫০০ কোটি টাকার সম্পদ নিয়ে দুদকের তদন্ত

ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির অভিযোগে ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু গ্রেপ্তার, ৫০০ কোটি টাকার সম্পদ নিয়ে দুদকের তদন্ত

বরগুনা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর বিরুদ্ধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমি অবৈধভাবে দখল ও সেখানে ব্যক্তিগত স্থাপনা নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। ক্ষমতার অপব্যবহার করে বরগুনা সদর উপজেলা পরিষদের সামনে অবস্থিত দিঘির অর্ধেক জমি ভরাট করে বাড়ি নির্মাণ করেন বলে স্থানীয়দের দাবি

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অভিযানে বরগুনা-১ আসনের পাঁচবারের সাবেক সংসদ সদস্য এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু রাজধানীর উত্তরা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাঁকে গত সোমবার ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হলে ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, সরকারি সম্পত্তি আত্মসাৎ, গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ কর্মসূচি (টিআর) এবং কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) কর্মসূচির অর্থ আত্মসাৎসহ নানা দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। এসব কর্মকাণ্ডে ৫০০ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) শম্ভুর বিরুদ্ধে তদন্ত পরিচালনা করছে।

prothomalo-bangla_2024-11-13_dio7k770__DH0700_20241112_IMG_20241112_154828_768 (1)
সাবেক সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু বরগুনা সদর উপজেলা পরিষদের সামনে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধিগ্রহণ করা জমি ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজের দখলে নেন। দিঘির অর্ধেকটা ভরাট করে বাড়ি বানান । ছবিঃ সংগৃহীত

ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর বিরুদ্ধে বিভিন্ন খাত থেকে অর্থ আত্মসাৎ ও সম্পদ আত্মীয়দের নামে করার অভিযোগ নতুন নয়। তার ক্ষমতার আসনে বসার পর থেকেই বরগুনায় সরকারি প্রকল্প, ভূমি অধিগ্রহণ, দলীয় পদসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয় রাজনীতিতে তাঁর প্রভাব ছিল গভীর এবং তিনি বরগুনা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন। দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে বরগুনার স্থানীয় রাজনীতিতে তাঁর এই প্রভাবই তাকে "আওয়ামী গডফাদার" খেতাব এনে দেয়।

অভিযোগের প্রকৃতি

ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে বরগুনা সদর উপজেলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) জমি দখল করেছেন এবং সরকারি বরাদ্দকৃত অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শম্ভু কৌশলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধিগ্রহণকৃত একটি বিশাল জমির একাংশ নিজের নামে করিয়েছেন, যা পরবর্তীতে তিনি বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে সুরক্ষিত করে তার ব্যক্তিগত সম্পদে পরিণত করেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, বরগুনা পৌরসভার অর্থায়নে তিনি নিজস্ব প্লে গ্রাউন্ড, সড়ক, ড্রেনেজ ব্যবস্থা নির্মাণ এবং ল্যাম্পপোস্ট স্থাপন করেন।

prothomalo-bangla_2024-11-13_hiis0c7n_DH07002024111220241112171854
আমতলী পৌর শহরের খাদ্য গুদাম এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে এই জমি ইজারা নেন ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু । ছবিঃ সংগৃহীত

অভিযোগ মতে, শুধু ২০২১ ও ২০২২ অর্থবছরে টিআর, কাবিখা ও কাবিটা প্রকল্পের অধীনে বরগুনা-১ আসনে তিন কিস্তিতে মোট ৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এই অর্থ বরাদ্দের অধিকাংশই তিনি আত্মসাৎ করেছেন বলে জানা গেছে। এসব প্রকল্পে সুনির্দিষ্টভাবে শম্ভুর পছন্দের লোকজনকে বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হতো। এসব প্রক্রিয়ায় কমিশন হিসেবে লাখে ২০ হাজার টাকা নেওয়া হতো বলে স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে। স্থানীয় নেতাকর্মীদের অভিযোগ, এই দুর্নীতির বলয় এতটাই প্রভাবশালী ছিল যে সাধারণ জনগণ কোনো ধরনের উন্নয়ন প্রকল্পে সহায়তা পেত না।

দলীয় পদে স্বজনপ্রীতি

শম্ভু দীর্ঘদিন ধরে বরগুনায় আওয়ামী লীগ এবং অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদে তাঁর ঘনিষ্ঠ আত্মীয়স্বজনদের নিয়োগ করেছেন। তাঁর স্ত্রী মাধবী দেবনাথ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং তাঁর একমাত্র পুত্র সুনাম দেবনাথ জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক। এ ছাড়া ছেলে সুনামের শ্বশুর অমল তালুকদার জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ এবং চাচাশ্বশুর সুবল তালুকদার প্রচার সম্পাদক পদে আসীন। দলের ত্যাগী নেতাদের প্রতি উপেক্ষা এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের প্রভাবিত করে দলীয় শৃঙ্খলা বিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগে দলের ভেতরেও ব্যাপক সমালোচনা ছিল।

ব্যক্তিগত সম্পদের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি

ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর সম্পদের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি অনেকের কাছেই দৃষ্টিকটু হয়ে উঠেছে। ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি যখন প্রথমবার হলফনামা দাখিল করেন, তখন তাঁর আয় ছিল মাত্র ২ লাখ ১০ হাজার টাকা এবং ব্যাংক জমা ছিল ৩ লাখ টাকা। তাঁর স্ত্রীর নামে ১২ লাখ টাকার সঞ্চয় ছিল এবং তাঁর স্থাবর সম্পত্তির মধ্যে ৫৭ লাখ টাকার জমি ছিল। কিন্তু, বর্তমানে তাঁর আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৫ লাখ টাকায় এবং ব্যাংক জমা ৩ কোটি টাকারও বেশি। স্ত্রীর নামে রয়েছে আরও প্রায় কোটি টাকার সম্পদ।

দুর্নীতি দমন কমিশন সম্প্রতি তার ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে ৫০০ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের অভিযোগে তদন্ত শুরু করেছে। সংস্থাটির পক্ষ থেকে তার এবং তার পরিবারের সদস্যদের সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিশ পাঠানো হয়েছে। এরই মধ্যে তিনি আত্মগোপনে চলে গিয়েছিলেন এবং সোমবার রাতে ঢাকার উত্তরা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর এই গ্রেপ্তার ও সম্পদ জব্দ কার্যক্রম স্থানীয় রাজনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলতে পারে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

 

নিউজ ডেস্ক

প্রভাত সময় ২৪