• 23 Jan, 2025

চলে গেলেন প্রেম ও বিদ্রোহের কবি হেলাল হাফিজ

চলে গেলেন প্রেম ও বিদ্রোহের কবি হেলাল হাফিজ

বাংলা সাহিত্যের প্রেম ও বিদ্রোহের কবি হেলাল হাফিজ ৭১ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেছেন। তার কবিতা বাংলাদেশের সাহিত্যের অঙ্গনে চিরস্থায়ী প্রভাব রেখে গেছে।

বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শক্তিশালী কবি, প্রেম ও বিদ্রোহের কবিতার জন্য খ্যাত হেলাল হাফিজ আর নেই। দীর্ঘদিন অসুস্থতায় ভোগার পর শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) বিকেলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তার বয়স হয়েছিল ৭১ বছর।

কবি হেলাল হাফিজ দীর্ঘদিন গ্লুকোমা, কিডনি জটিলতা, ডায়াবেটিস এবং স্নায়বিক সমস্যায় আক্রান্ত ছিলেন। তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন চলচ্চিত্র নির্মাতা শবনম ফেরদৌসী। তিনি জানান, কবি শাহবাগের একটি হোস্টেলে বসবাস করতেন। সেখানেই মৃত্যুবরণ করলে তাকে বিএসএমএমইউ হাসপাতালে নেওয়া হয়।

১৯৪৮ সালের ৭ অক্টোবর নেত্রকোণার বারহাট্টায় জন্মগ্রহণ করেন হেলাল হাফিজ। নেত্রকোণায় স্কুল-কলেজ শেষে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৭২ সালে দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকায় সাংবাদিকতা শুরু করেন এবং সাহিত্য সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে দৈনিক যুগান্তরে তার কর্মজীবন শেষ হয়।

কবিতার মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করা হেলাল হাফিজ ১৯৮৬ সালে প্রকাশিত তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ “যে জলে আগুন জ্বলে” দিয়ে যে আলোড়ন সৃষ্টি করেন তা আজও অমলিন। এই বইয়ের অসংখ্য সংস্করণ হয়েছে, যা বাংলাদেশের কবিতার ইতিহাসে একটি বিরল ঘটনা। এরপর ২০১২ সালে প্রকাশিত হয় তার দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ “কবিতা একাত্তর” এবং ২০১৯ সালে তৃতীয় বই “বেদনাকে বলেছি কেঁদো না”

উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের সময় লেখা তার কবিতা “নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়” এর পঙক্তি—“এখন যৌবন যার, মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়/ এখন যৌবন যার, যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়”—বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে আজও প্রেরণা জুগিয়ে চলছে।

ব্যক্তি জীবনে বৈষয়িকতা থেকে দূরে থেকে কবিতাকেই জীবনের মূলমন্ত্র করেছিলেন হেলাল হাফিজ। তিনি চিরকুমার থেকে সাহিত্যের সাধনায় জীবন অতিবাহিত করেছেন। তার কবিতার জন্য তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার (২০১৩), যশোর সাহিত্য পরিষদ পুরস্কার (১৯৮৬), আবুল মনসুর আহমদ সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৭) এবং নেত্রকোনা সাহিত্য পরিষদ পুরস্কারসহ নানা সম্মাননায় ভূষিত হন।

তার মৃত্যুতে সাহিত্য জগতে অপূরণীয় শূন্যতা সৃষ্টি হলো। তার কবিতা ও জীবনদর্শন বাংলা সাহিত্যপ্রেমীদের হৃদয়ে চিরকাল বেঁচে থাকবে।

নিউজ ডেস্ক

প্রভাত সময় ২৪