অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘ভবিষ্যতের বাংলাদেশ হবে ন্যায়বিচার, মানবাধিকার এবং বাক্স্বাধীনতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।’
শনিবার সকালে রাজধানীর একটি হোটেলে তিন দিনের আন্তর্জাতিক সম্মেলন ‘বে অব বেঙ্গল কনভারসেশন ২০২৪’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন। বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত এই সম্মেলনে দেশি-বিদেশি নানা বিশিষ্ট ব্যক্তি অংশগ্রহণ করেন।
ড. ইউনূস বলেন, ‘আমরা মাত্র ১০০ দিন আগে একটি ঐতিহাসিক রাজনৈতিক পরিবর্তনের সাক্ষী হয়েছি। তরুণদের নেতৃত্বে সংঘটিত গণ-অভ্যুত্থান একটি ফ্যাসিস্ট সরকারকে উৎখাত করেছে, যা আমাদের ভবিষ্যতের জন্য আশার আলো দেখিয়েছে। তবে এ পরিবর্তনের জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। ১ হাজার ৫০০ তরুণ প্রাণ হারিয়েছে, আহত হয়েছে ২০ হাজারের বেশি। এই সংলাপের মঞ্চে আমরা তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দেশ বারবার প্রমাণ করেছে, সংকট মোকাবিলায় আমরা সক্ষম। অর্থনৈতিক বৈষম্য, সামাজিক অবিচার এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মতো চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও আমরা এগিয়ে যেতে পারি। এজন্য প্রয়োজন ন্যায়বিচার, মানবাধিকার এবং সবার জন্য বাক্স্বাধীনতা নিশ্চিত করা।’
পরিবেশগত সংকট ও বৈষম্যের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, ‘আমাদের বর্তমান সভ্যতা ব্যর্থ হয়েছে, কারণ এটি শুধু মুনাফার পেছনে ছুটেছে। আসুন আমরা এমন একটি সভ্যতা গড়ে তুলি, যেখানে সম্পদ সুষমভাবে বণ্টন হবে এবং মানবিক মূল্যবোধকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।’
তিনি তিনটি লক্ষ্য নির্ধারণের কথা বলেন— শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব এবং শূন্য কার্বন নিঃসরণ। তাঁর মতে, এই লক্ষ্য পূরণে ধৈর্য এবং সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।
বিদেশি অতিথিদের উদ্দেশে ড. ইউনূস বলেন, ‘আপনারা ঢাকার রাস্তাগুলোতে তরুণদের আঁকা চিত্রকর্ম দেখে মুগ্ধ হবেন। এটি তরুণদের সৃজনশীলতার প্রতীক। এই শিল্পকর্মের পেছনে কোনো কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা বা তহবিল ছিল না; এটি তাঁদের আবেগ ও আকাঙ্ক্ষার বহিঃপ্রকাশ।’
‘বে অব বেঙ্গল কনভারসেশন ২০২৪’-এর এবারের প্রতিপাদ্য ছিল ‘একটি ভঙ্গুর বিশ্ব’। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ, বলিভিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট ফার্নান্দো রামিরেজ, এবং সিজিএস চেয়ারপারসন মনিরা খান বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান।
প্রধান উপদেষ্টা তাঁর বক্তব্য শেষ করেন এই আহ্বানের মাধ্যমে— ‘মানবাধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনে আমরা একত্রিত হই। ভবিষ্যতের জন্য এই সংলাপ একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।’