• 23 Jan, 2025

মূল্যস্ফীতি ও চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য পাইনি: ড. মুহাম্মদ ইউনূস

মূল্যস্ফীতি ও চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য পাইনি: ড. মুহাম্মদ ইউনূস

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, মূল্যস্ফীতি ও পরিবহন খাতে চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণে সরকার এখনো কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জন করতে পারেনি। মহান বিজয় দিবসে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি জানান, সরবরাহ বৃদ্ধি, শুল্ক ছাড় এবং বাজার তদারকির মাধ্যমে দ্রব্যমূল্য কমানোর চেষ্টা চলছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস স্বীকার করেছেন যে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং পরিবহন খাতে চাঁদাবাজি বন্ধে সরকার এখনো কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জন করতে পারেনি। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।

ড. ইউনূস বলেন, "মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করছে। তবে এখনো আমরা কাঙ্ক্ষিত সাফল্য পাইনি। আশা করছি, শিগগিরই মূল্যস্ফীতির চাপ কিছুটা কমবে।" তিনি উল্লেখ করেন, সরবরাহ বৃদ্ধি, আমদানিতে শুল্ক ছাড়, বাজার তদারকি এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে সরকার সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।

চাঁদাবাজি বন্ধ না হওয়ায় মূল্যস্ফীতির প্রভাব

পরিবহন খাতে চাঁদাবাজি বন্ধে এখনো শতভাগ সফলতা অর্জন না হওয়ায় মূল্যস্ফীতির ওপর প্রভাব পড়ছে বলে জানান প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, "পরিবহন খাতে চাঁদাবাজি পুরোপুরি বন্ধ করা গেলে বাজারে পণ্যের দাম আরও কমানো সম্ভব হতো।"

রমজানে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে উদ্যোগ

আসন্ন রমজানে দ্রব্যমূল্য সহনীয় রাখতে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, "বাজারে পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করতে এবং কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির প্রবণতা ঠেকাতে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।" পাশাপাশি, বিকল্প কৃষি বাজার চালুর মাধ্যমে বাজার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার।

অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত

দেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সরকারের সফলতার বিষয়ে ড. ইউনূস বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের সময় দেশের অর্থনীতি ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছিল। গত চার মাসে অর্থনীতির বেশ কিছু সূচকে উন্নতি হয়েছে।” তিনি আরও বলেন, নভেম্বর মাসে রপ্তানি আয় আগের মাসের তুলনায় ১৫.৬৩ শতাংশ বেড়ে ৪.১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। সামগ্রিকভাবে জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত রপ্তানি আয় ১৬.১১ বিলিয়ন ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১২.৩৪ শতাংশ বেশি। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন ১৯ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে।

অর্থনৈতিক শ্বেতপত্র ও লুটপাটের চিত্র

ড. ইউনূস জানান, অর্থনীতির শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রতিবেদন দেশবাসীকে হতবাক করেছে। এতে দেখা গেছে, “বার্ষিক উন্নয়ন ব্যয়ের প্রায় অর্ধেক টাকা লুটপাট হয়েছে। প্রকল্পের মোড়কে এই বিপুল অর্থ বিদেশে পাচার করা হয়েছে।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, "পাচারকৃত অর্থ এখন দেশের সংহতি নষ্ট করতে এবং অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে ব্যবহার করা হচ্ছে।" বাংলাদেশ ব্যাংক পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে বলেও জানান তিনি।

সংহতি বজায় রাখার আহ্বান

ড. ইউনূস বলেন, "অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ও মানুষের জীবনমান উন্নয়নে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। বিপর্যস্ত অর্থনীতিকে ঘুরে দাঁড় করানোর প্রক্রিয়ায় আপনাদের সহযোগিতা প্রয়োজন।" তিনি দেশের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ ও সজাগ থাকার আহ্বান জানান।

নিউজ ডেস্ক

প্রভাত সময় ২৪