• 23 Jan, 2025

সিভিল ড্রেসে গ্রেপ্তার নয়, আয়না ঘর থাকবে না—স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

সিভিল ড্রেসে গ্রেপ্তার নয়, আয়না ঘর থাকবে না—স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, ডিবি কার্যালয়ে কোনো আয়না ঘর বা ভাতের হোটেল থাকবে না। সিভিল ড্রেসে কাউকে গ্রেপ্তার নয়, জ্যাকেট পরিধান ও আইডি কার্ড প্রদর্শন বাধ্যতামূলক। লিবিয়ায় আটক প্রবাসীদের ফিরিয়ে আনার বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। টেকনাফের অপহরণ ও সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, ডিবি কার্যালয়ে কোনো "আয়না ঘর" বা "ভাতের হোটেল" থাকবে না। এছাড়া, ডিবি (গোয়েন্দা পুলিশ) সিভিল ড্রেসে কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারবে না। গ্রেপ্তারের সময় অবশ্যই ডিবি জ্যাকেট পরিধান করবে এবং আইডি কার্ড প্রদর্শন করতে হবে। সোমবার (৬ জানুয়ারি) দুপুর সোয়া ১২টার দিকে ডিবি কার্যালয় পরিদর্শন শেষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। ডিবি কার্যালয়ের অভ্যন্তরীণ কার্যক্রম পর্যালোচনা এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নে করণীয় নিয়ে এই বিশেষ সফর অনুষ্ঠিত হয়।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “ডিবি কার্যালয়ে ‘আয়না ঘর’ ছিল বলে শুনেছি। তবে আমি পরিদর্শন করেছি, এমন কোনো ঘর এখানে নেই। আমি ডিবিকে বলেছি, এই কার্যালয়ের ভেতরে যে পুকুর রয়েছে, সেটি যেন আয়নার মতো পরিষ্কার রাখা হয়। ভবিষ্যতে ডিবি কার্যালয়ে এমন কোনো বিতর্কিত ঘর বা কার্যক্রম থাকবে না।” তিনি আরও বলেন, “কোনো অপরাধীকে গ্রেপ্তারের সময় ডিবিকে সুনির্দিষ্ট প্রোটোকল মেনে কাজ করতে হবে। সিভিল ড্রেসে কাউকে আটক করা যাবে না। জ্যাকেট পরিধান ও আইডি কার্ড প্রদর্শন বাধ্যতামূলক। আইনবহির্ভূত কোনো কার্যক্রম করলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

লিবিয়ায় আটক এক হাজারের বেশি বাংলাদেশি এবং তাদের ওপর চলমান নির্যাতনের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “যারা লিবিয়ায় আটকা পড়েছে, তারা আমাদের দেশের সম্পদ। তাদের দেশে ফিরিয়ে আনতে যা যা করণীয়, আমরা তা করব। তবে এ বিষয়ে ভুক্তভোগীদের সুনির্দিষ্ট তথ্য আমাদের জানাতে হবে। কেউ প্রতারণার শিকার হলে তাদের পরিবার আমাদের কাছে অভিযোগ করতে পারে। আমরা অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।” লিবিয়ায় বন্দি প্রবাসীদের পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় মামলা গ্রহণে গড়িমসির অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, “মামলা নিতে কোনো অনুমতির প্রয়োজন নেই। এ ধরনের ঘটনা প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট থানার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

টেকনাফে একের পর এক অপহরণের ঘটনায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, “টেকনাফে অপহরণের ঘটনাগুলো নজরদারিতে রয়েছে। অপহৃতদের উদ্ধার করা হয়েছে। মিয়ানমারের সীমান্ত পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠেছে। আরাকান আর্মি মিয়ানমারের ওই অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ফেলেছে, যেখানে তাদের সরকারি বাহিনীর কোনো উপস্থিতি নেই। আমরা সীমান্ত সুরক্ষা নিশ্চিত করতে উভয় পক্ষের সঙ্গেই যোগাযোগ রাখছি। তবে আমাদের নিজস্ব বর্ডার সুরক্ষায় আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক রয়েছি।” ঢাকায় ছিনতাই বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, “ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়েছে, এটা অস্বীকার করা যাবে না। তবে পুলিশ অভিযান চালিয়ে অনেক অপরাধীকে আটক করছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বর্তমানে মোটামুটি ভালো। তবে এটি আরও উন্নত করতে পুলিশের কার্যক্রম জোরদার করা হবে।”

পুলিশ একাডেমি থেকে ৩২১ জন এসআই বের করে দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “শৃঙ্খলাজনিত কারণে পুলিশ একাডেমি থেকে যারা বাদ পড়েছে, তাদের আর বাহিনীতে নেওয়া হবে না। কারণ, পুলিশ শৃঙ্খলাবদ্ধ বাহিনী। যারা শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছে, তাদের পুনর্বহাল করার সুযোগ নেই। মিডিয়ার ভূমিকায় প্রশংসা করে তিনি বলেন, “আপনারা সঠিক তথ্য প্রকাশ করছেন, যা আমাদের জন্য অপরাধ দমন ও আইন প্রয়োগে সহায়ক। ভারতের মিথ্যা প্রচারণার বিপরীতে আপনারা যেভাবে সত্য প্রকাশ করেছেন, তা ইন্ডিয়ার অপপ্রচার কমাতে ভূমিকা রেখেছে। ভবিষ্যতেও আপনাদের এমন দায়িত্বশীল ভূমিকা প্রত্যাশা করি।”

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, “আমরা সবাইকে নিয়ে একটি সুশৃঙ্খল ও নিরাপদ বাংলাদেশ গড়তে চাই। এজন্য মিডিয়া, প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে সমন্বয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।” স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার এই সফর এবং বক্তব্য দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও উন্নত করার সংকল্পকে শক্তিশালী করেছে। তার নির্দেশনা অনুসারে ডিবি এবং অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ভবিষ্যতে আরও পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

নিউজ ডেস্ক

প্রভাত সময় ২৪