• 23 Jan, 2025

হাসিনা-রেহানা পরিবারের দুর্নীতি অনুসন্ধানের জন্য দুদকের টিম গঠন

হাসিনা-রেহানা পরিবারের দুর্নীতি অনুসন্ধানের জন্য দুদকের টিম গঠন

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ ৮টি প্রকল্পে ৮০ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে পাঁচ সদস্যের টিম গঠন করেছে।

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে পাঁচ সদস্যের বিশেষ টিম গঠন করেছে। দুদকের উপপরিচালক মো. সালাহউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত এই টিম রূপপুর প্রকল্প থেকে ৫০০ কোটি ডলার বা প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎসহ মোট ৮০ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ খতিয়ে দেখবে।

গ্লোবাল ডিফেন্স কর্পোরেশন ও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, বোন শেখ রেহানা, এবং ভাগনি টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে রূপপুর প্রকল্প থেকে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠে। প্রতিবেদনে বলা হয়, রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান রোসাটমের মাধ্যমে মালয়েশিয়ার ব্যাংকের একটি অফশোর অ্যাকাউন্টে এই অর্থ স্থানান্তর করা হয়। অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, এই দুর্নীতির মাধ্যমে পাচার করা অর্থের একটি অংশ মধ্যস্থতার জন্য পেয়েছেন শেখ রেহানা ও টিউলিপ সিদ্দিক। প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, প্রকল্পের ব্যয়ের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং বাজেটের অতিরিক্ত অংশ আত্মসাতের উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে মালয়েশিয়ার মাধ্যমে অর্থ সরানো হয়েছে। এছাড়া, ২০১৩ সালে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠকের সময় অস্ত্র চুক্তির মধ্যস্থতায়ও অনিয়মের তথ্য উঠে এসেছে। এই চুক্তি থেকে পরিবারটির ৩০ শতাংশ কমিশন নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদকের নিষ্ক্রিয়তা চ্যালেঞ্জ করে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম) চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ ৩ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করেন। রিটের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৫ ডিসেম্বর হাইকোর্ট একটি রুল জারি করে।হাইকোর্ট দুদকের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে ব্যাখ্যা তলব করে। এর পরিপ্রেক্ষিতেই বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) দুদক আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্ত টিম গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়।

গ্লোবাল ডিফেন্স কর্পোরেশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন অফশোর কোম্পানি ব্যবহার করে দুর্নীতি করা অর্থ পাচার করতেন। ২০০৯ সালে “প্রচ্ছায়া লিমিটেড” নামে একটি ভুয়া কোম্পানি এবং যুক্তরাষ্ট্রে “জুমানা ইনভেস্টমেন্ট” নামে আরেকটি কোম্পানি গঠন করা হয়। এই কোম্পানিগুলো যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে প্রায় ৯০০ মিলিয়ন ডলার পাচার করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া, ডেসটিনি গ্রুপের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার মাধ্যমে আরও অর্থ আত্মসাতের তথ্য উঠে আসে।

এই তদন্ত টিমের সামনে চ্যালেঞ্জ রয়েছে এসব অভিযোগের বিশ্বাসযোগ্যতা যাচাই এবং আন্তর্জাতিক অর্থ লেনদেনের তথ্য সংগ্রহ করা। বিষয়টি রাজনৈতিকভাবে সংবেদনশীল হওয়ায় স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার মাধ্যমে তদন্ত সম্পন্ন করার ওপর জোর দিয়েছে বিভিন্ন মহল। দুদকের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, “তদন্ত কার্যক্রম স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ এবং দ্রুতগতিতে এগিয়ে নেওয়া হবে। প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটনের জন্য প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেওয়া হবে।” রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পসহ অন্যান্য দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে দুদকের পদক্ষেপ দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। এই তদন্ত থেকে উঠে আসা তথ্য ভবিষ্যতে বাংলাদেশের দুর্নীতি মোকাবিলায় নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে।

নিউজ ডেস্ক

প্রভাত সময় ২৪