নওগাঁয় মৃদু শৈত্য প্রবাহে কনকনে শীতে জনজীবনে বেড়েছে ভোগান্তি। দিনের বেলা বইতে থাকা হিমেল হাওয়ার কারণে চরম শীত কষ্টে পড়েছেন জেলার খেটে খাওয়া দিনমজুর, কৃষি শ্রমিক ও রিকশা ভ্যান চালকরা। দিনমজুরদের আয় প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। ব্যাহত হচ্ছে চলতি মৌসুমের ইরি-বোরো চাষাবাদ। শীতের কারণে মাঠে মাঠে ইরি-বোরো চাষাবাদ অনেকটাই বিলম্বিত হচ্ছে। বাড়ছে ডায়রিয়া, আমাশয়, শ্বাসকষ্টসহ শীতজনিত রোগ।
নওগাঁর বদলগাছি আবহাওয়া অফিসে আজ সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮.০৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। হিমেল বাতাসের কারণে জেলায় সারাদিনই শীত অনুভূত হওয়ায় শীত কষ্ট পোহাচ্ছেন জেলার শহর ও গ্রামীণ জনপদের মানুষজন। সকালে সূর্য উঠলেও নিরুত্তাপ রোদ্রের কারণে কনকনে শীত অনুভূত হচ্ছে। নওগাঁর বরুনকান্দি এলাকার ইরি-বোরো চাষি আইনুল হক বলেন, “কয়েকদিন ধরেই নওগাঁয় আবারও শীত পড়েছে। এই কনকনে শীতের কারণে চলতি মৌসুমের ইরি-বোরো রোপণের জন্য জমি ভেজানো, হাল চাষ, চারা রোপণ অনেকটাই বিলম্বিত হচ্ছে। এছাড়া শীতের কারণে মাঠে কাজ করতে চাইছে না কৃষি শ্রমিকরা। এ অবস্থায় শ্রম মজুরি ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বাড়িয়ে দিয়ে কাজ করাতে হচ্ছে।”
নওগাঁ শহরতলীর কাঠালতলী এলাকার রিকশা চালক একরামুল হক বলেন, “প্রচণ্ড শীতের কারণে সকালে ঘর থেকে বের হতে খুব কষ্ট হয়। এর সাথে হিমেল বাতাসে হাত-পা যেন বাঁকা হয়ে আসে। এ অবস্থায় যাত্রী কমে যাওয়ায় আমাদের আয় অর্ধেকে নেমে এসেছে। একই অবস্থা দিনমজুরদের।” নওগাঁ সদর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক আনছার আলী বলেন, “শীতের কারণে বাড়ছে ডায়রিয়া, আমাশয়, শ্বাসকষ্টসহ শীতজনিত রোগ। শীতজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন গড়ে ৫০ থেকে ৬০ জন নওগাঁ সদর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন।”
নওগাঁ জেলা প্রশাসক আব্দুল আউয়াল জানান, “জেলায় শীতার্ত মানুষজনের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, জেলা পরিষদ, জেলা প্রশাসন ও স্থানীয়ভাবে সংগৃহিত প্রায় ৭৫ হাজার শীতবস্ত্র দরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। এখনও শীতার্ত মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ চলছে।” নওগাঁ বদলগাছি আবহাওয়া অধিদপ্তরের উচ্চ পর্যবেক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, “উত্তরের হিমেল বাতাসে মৃদু শৈত্য প্রবাহের কারণে তাপমাত্রা নিম্নমুখী হতে শুরু করেছে। তাপমাত্রার ব্যবধান কমে যাওয়ায় তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে। আজ জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮.০৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল জেলায় তাপমাত্রা ছিল ১০.০৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।” আকাশ পরিষ্কার থাকলেও শৈত্য প্রবাহের কারণে তাপমাত্রা আরও কিছুটা নিচে নামতে পারে বলেও জানান তিনি।