নির্বাচিত সরকারের মেয়াদ পাঁচ বছর রাখার প্রস্তাবে অটল রয়েছে বিএনপি। দলটি মনে করে, দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা এবং সরকারের কাজের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পাঁচ বছরের মেয়াদ অপরিহার্য। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সম্প্রতি চার বছরের মেয়াদের প্রস্তাব উত্থাপন করলেও বিএনপি এবং তাদের মিত্র দলগুলো এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “চার বছর পরপর নির্বাচন হলে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা বাড়বে। এটি শুধু সময় ও অর্থের অপচয় নয়, বরং সরকারের কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা ব্যাহত করবে। পাঁচ বছরের মেয়াদ দেশের অর্থনীতি ও রাজনীতির জন্য স্থিতিশীলতা আনবে।” সম্প্রতি জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনের (কপ২৯) ফাঁকে কাতারভিত্তিক টিভি চ্যানেল আল-জাজিরার সঙ্গে সাক্ষাৎকারে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, "মানুষ সরকারের মেয়াদ কম চায়। সংবিধানে নতুন করে চার বছরের প্রস্তাব আনা হচ্ছে।" এ প্রস্তাব রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
বিএনপি স্পষ্ট জানিয়েছে, নির্বাচিত সরকারের মেয়াদ কমানোর দায়িত্ব অন্তর্বর্তী সরকারের নয়। বরং এটি জনগণের এবং নির্বাচিত সরকারের সিদ্ধান্ত হওয়া উচিত। বিএনপি ও তাদের মিত্র দলগুলো মনে করে, এই ধরনের সিদ্ধান্তে রাজনৈতিক ঐক্যমত্য প্রয়োজন। যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিএনপি ইতোমধ্যে তাদের নিজস্ব ছয়টি কমিশন গঠন করেছে, যা ৩১ দফার ভিত্তিতে সংস্কার প্রস্তাব তৈরি করছে। তবে এ প্রস্তাবনায় নির্বাচিত সরকারের মেয়াদ কমানোর কোনো বিষয় নেই। দলটি বরং রাজনৈতিক অঙ্গনে ভারসাম্য আনতে সংসদীয় ব্যবস্থার সংস্কারের ওপর জোর দিচ্ছেবি। এনপির পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামী এবং গণতন্ত্র মঞ্চও পাঁচ বছরের মেয়াদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। জামায়াতের প্রচার সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, “দেশের অর্থনীতি ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় চার বছর পরপর নির্বাচন করা কঠিন। পাঁচ বছর মেয়াদই যথাযথ।” গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, “পাঁচ বছরের মেয়াদ প্রতিষ্ঠিত একটি বিষয়। এটি কমানোর চিন্তা নতুন বিতর্কের সৃষ্টি করবে। যুক্তরাজ্যেও সংসদীয় গণতন্ত্রে সরকারের মেয়াদ পাঁচ বছর।”
তবে কিছু দল চার বছরের মেয়াদের পক্ষে মত দিয়েছে। গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক বলেন, “নির্বাচিত সরকারগুলোর স্বৈরাচারী আচরণ রোধে মেয়াদ কমানো যেতে পারে।" বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলনের যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমানও চার বছর মেয়াদ নিয়ে তেমন আপত্তি জানাননি। বিএনপির মিত্র ১২-দলীয় জোটের মুখপাত্র শাহাদাত হোসেন বলেছেন, “রাজনৈতিক ঐকমত্য ছাড়া নির্বাচিত সরকারের মেয়াদ কমানোর কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণযোগ্য হবে না।” পাঁচ বছরের মেয়াদ নিয়ে বিএনপির দৃঢ় অবস্থান রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। দলটি মনে করে, এই সময়সীমা দেশের উন্নয়ন ও শান্তির জন্য অপরিহার্য। তাদের মতে, জনমতের প্রতিফলনেই কেবল এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।