• 22 May, 2025

নওগাঁয় তীব্র তাপদাহে জনজীবনে হাঁসফাঁস অবস্থা বিপাকে খেটে খাওয়া মানুষজন

নওগাঁয় তীব্র তাপদাহে জনজীবনে হাঁসফাঁস অবস্থা বিপাকে খেটে খাওয়া মানুষজন

নওগাঁয় গত ৪ দিন ধরে তীব্র তাপদাহে জনজীবনে হাঁসফাঁস অবস্থা বিরাজ করছে। তাপদাহে প্রচণ্ড গরমের কারণে স্বাভাবিক কাজ ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি গরমের জ্বালায় রাতের ঘুমও হারাম হয়ে গেছে জেলার মানুষের।

IMG_20250512_002952
IMG_20250512_002943
IMG_20250512_002929
 

গরমে ঘেমে নেয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। মাঠে-ঘাটে, কলকারখানায় কাজ করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে কৃষি শ্রমিক, দিনমজুর ও খেটে খাওয়া লোকজনের। তাপদাহের কারণে ক্ষতির মুখে পড়েছে চলতি আম ও লিচু। জেলার অন্যতম ফসল আমে তাপদাহের প্রভাব পড়ছে; আম গাছ থেকে ঝরে পড়ছে। পানি স্প্রে করে আম রক্ষার চেষ্টা করছেন চাষিরা। ইতোমধ্যে তীব্র গরমে সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া, আমাশয় রোগে আক্রান্ত হচ্ছে ছোট-বড় সব বয়সের মানুষ।

IMG_20250512_002907
 

নওগাঁ সড়ক উন্নয়ন কাজের শ্রমিক শিপলু খান জানান, দিনের বেলা সড়কে দাঁড়ানো কিংবা কাজ করা খুবই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। তীব্র তাপদাহ ও গরমে সড়কে পিচ গলে যাচ্ছে, আমাদের হাত-পা ও শরীর যেন জ্বলছে।

IMG_20250512_002920
 

নওগাঁ সদরের বোয়ালিয়া এলাকার কৃষক আজিজার রহমান বলেন, গরমে কৃষি শ্রমিকরা মাঠে ঠিকমতো ধান কাটা-মাড়াই করতে পারছেন না। ১ ঘণ্টা কাজের পর আধা ঘণ্টা বিশ্রাম নিতে হচ্ছে তাদের। এ কারণে কাটা-মাড়াই বিলম্বিত হওয়ার পাশাপাশি শ্রমিক মজুরি মাথাপিছু ২০০ থেকে ২৫০ টাকা বেড়েছে। বাড়ির কৃষাণিরা ছাতা নিয়ে ধান সিদ্ধ ও শুকানোর কাজ করছেন।

IMG_20250512_002842
 

গরমের জ্বালায় রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে জেলার মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের লোকজনের। ফুল স্পিডে বৈদ্যুতিক ফ্যান চালিয়েও শরীর ঠান্ডা হচ্ছে না, বরং ঘামে ভিজে যাচ্ছে বিছানার চাদর ও বালিশ। গরমে ঘাম বসে গিয়ে শিশু, বয়স্কসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ সর্দি, কাশি, ডায়রিয়াসহ নানা অসুখে আক্রান্ত হচ্ছে বলে জানান মহাদেবপুর উপজেলার উত্তর গ্রামের সাদ্দাম হোসেন।

IMG_20250512_002827
 

জেলার সাপাহার সদরের বাসিন্দা বাবুল আখতার বলেন, এমনিতেই এ বছর খরার কারণে আম ঝরে যাওয়ায় উৎপাদন অনেকটা কম হবে। গত ৪/৫ দিন ধরে ফের তাপদাহের কারণে গাছ থেকে ঝরে পড়ছে আম। ফলে চরম দুশ্চিন্তায় জেলার আমচাষি ও বাগান মালিকরা।

IMG_20250512_002853
 

নওগাঁ শহরের রিকশাচালক ইয়াছিন আলী বলেন, রাস্তায় যেন আগুনের তাপ ছড়াচ্ছে। তীব্র গরমের কারণে আমরা ঠিকমতো রিকশা চালাতে পারছি না। ঘন ঘন পানি পান করতে হচ্ছে। শহরে লোকজন না থাকায় ভাড়াও কমে গেছে। ফলে এখন সংসার চালানোই কঠিন হয়ে পড়েছে।

তীব্র তাপদাহ থেকে বাঁচাতে গরু, ছাগলসহ অন্যান্য পশুকে পুকুর, ডোবা, নদীতে গোসল করাচ্ছেন এদের মালিকরা। জেলায় কুকুরসহ অন্যান্য পশু-পাখিকেও পানিতে আশ্রয় নিতে দেখা গেছে।

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ, তীব্র তাপদাহের কারণে আম ঝরে পড়া রোধে গাছে পানি স্প্রে ও সম্ভব হলে গাছের গোড়ায় পানি দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

এ অবস্থায় নওগাঁ সদর জেনারেল হাসপাতাল থেকে প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের না হওয়া, ছায়াযুক্ত স্থানে অবস্থান করা ও বেশি করে খাবার স্যালাইন মিশ্রিত পানি পান করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. রাশেদুল হক বলেন, ইতোমধ্যে তীব্র তাপদাহের কারণে বেড়েছে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। গতকাল জেলার বদলগাছী কৃষি আবহাওয়া অফিসে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৯.০৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।