• 23 Jan, 2025

বিদ্যুৎ খাতে মিটার আমদানিতে কোটি টাকার বাণিজ্যে ‘ভাই-বন্ধু’ চক্রের যোগসাজশ

বিদ্যুৎ খাতে মিটার আমদানিতে কোটি টাকার বাণিজ্যে ‘ভাই-বন্ধু’ চক্রের যোগসাজশ

বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতে প্রিপেইড মিটার বিতরণে সাবেক প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের ঘনিষ্ঠ চক্রের মাধ্যমে বড় আকারের দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। মিটার কেনায় প্রতিযোগিতাহীন দরপত্র, অতিরিক্ত মূল্য নির্ধারণ ও বৈধ আমদানির আড়ালে বিদেশে টাকা পাচারের অভিযোগ রয়েছে। ভোক্তা অধিকার সংগঠন ক্যাব এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে।

6-4-750x375
ছবিঃ সংগৃহীত


বিদ্যুৎ খাতে গ্রাহকদের প্রিপেইড মিটার স্থাপনে নিয়োজিত কিছু চক্রের বিরুদ্ধে কোটি টাকার বাণিজ্য ও আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সাবেক বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের কিছু ‘ঘনিষ্ঠ বন্ধু-বান্ধব’ এই মিটার আমদানিতে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো থেকে প্রকাশ, এই চক্রটির মধ্যস্থতায় কয়েক হাজার কোটি টাকার প্রকল্পে প্রতিযোগিতা হীনভাবে কাজ পাইয়ে দেওয়া হয়েছে নির্দিষ্ট কোম্পানিগুলোকে, যা দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

প্রথম আলো থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০১০ সালে শুরু হওয়া প্রিপেইড মিটার স্থাপনের প্রকল্পে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বেশ কিছু বিতরণ সংস্থা এবং সরকারি কোম্পানিকে জড়িত করে মিটার আমদানির সুযোগ তৈরি করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, প্রতিমন্ত্রীর নিজস্ব বাসভবন থেকেই ঠিকাদার নির্বাচনের কাজ পরিচালিত হতো এবং এরপর উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে সেই ঠিকাদারকেই চূড়ান্তভাবে কাজ দেওয়া হতো।

এ বিষয়ে বিদ্যুৎ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান মন্তব্য করেছেন, “আমরা জানি যে প্রিপেইড মিটার কেনার ক্ষেত্রে চক্রের যোগসাজশ রয়েছে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকও (এডিবি) কিছু অভিযোগের ভিত্তিতে প্রিপেইড মিটারের অর্থায়ন একপর্যায়ে বন্ধ করে দেয়।”

চীনা কোম্পানির একচেটিয়া বাণিজ্য এবং স্থানীয় যোগসাজশ

বিশ্বস্ত সূত্র জানাচ্ছে, চীনের সেনজেন স্টার, হেক্সিং এবং ওয়াসিয়ন গ্রুপের সহযোগিতায় একটি বিশেষ গোষ্ঠী মিটার আমদানির নামে বিপুল অর্থ পাচার করেছে। দেশের বাইরে অতিরিক্ত মূল্য দেখিয়ে এই মিটার আমদানির কাজ চালানো হয়েছে। সেনজেন স্টারের স্থানীয় প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন নসরুল হামিদের আত্মীয় মাহবুব রহমান, যিনি পরে এই দায়িত্বে আসেন। এদিকে, শামীম নামে একজন ব্যবসায়ীও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছেন, যিনি একটি বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থায় মিটার সরবরাহে দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত।

মূল্য বৃদ্ধি ও নিম্নমানের পণ্য সরবরাহ

প্রাপ্ত নথিপত্রে জানা যায়, প্রিপেইড মিটার সরবরাহে মূল্য অতিরিক্ত ধার্য করা হয়েছে। যেখানে একটি মিটার ৪,৫০০ টাকা মূল্যে আমদানি করা যেতে পারতো, সেখানে এর মূল্য ৬,২২০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। মিটার কেনাকাটায় আরও বিভিন্ন খাতে ব্যয় বাড়ানো হয়েছে, যা প্রকল্প ব্যয়ের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির পেছনে একটি বড় কারণ। বিদ্যুৎ খাত সংশ্লিষ্টরা জানাচ্ছেন, এই প্রকল্পের মিটারগুলো মূলত নিম্নমানের এবং এদের কার্যকারিতা নিয়ে সাধারণ গ্রাহকদের মধ্যেও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।

ভোক্তাদের জন্য ক্ষতিপূরণের দাবি

ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি এম শামসুল আলম বলেন, “নিম্নমানের মিটার ব্যবহার করে হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। এই কেলেঙ্কারিতে জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ ও ক্ষতিপূরণ আদায় করতে হবে।” তিনি আরও বলেন, এই অর্থ লোপাটের জন্য জড়িত কর্মকর্তাদেরকে জবাবদিহিতার আওতায় আনার জন্য সরকারকে ত্বরান্বিত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

নতুন সিদ্ধান্ত এবং ভবিষ্যৎ কার্যক্রম

এদিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নতুন করে বিদ্যুৎ খাতে সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণের পরিকল্পনা করেছে। বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ও জানিয়েছে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করা হচ্ছে। বিদ্যুৎ খাতে গ্রাহকদের অধিকার নিশ্চিত করতে এবং প্রিপেইড মিটার স্থাপনে সঠিক ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়া অনুসরণে সংশ্লিষ্ট সবাইকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে আহ্বান জানানো হয়েছে।

নিউজ ডেস্ক

প্রভাত সময় ২৪