নওগাঁয় গত ৫ দিন ধরে তাপমাত্রা উঠানামা করছে ৯ থেকে ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে। ফলে ভোর থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত এবং সন্ধ্যা রাত থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ঘন কুয়াশায় ঢেকে থাকছে জেলার জনপদ। এর ফলে চরম শীতকষ্টে পড়েছেন জেলার খেটে খাওয়া দিনমজুর, কৃষি শ্রমিক ও রিকশা-ভ্যান চালকরা। ব্যাহত হচ্ছে চলতি মৌসুমের আলু, সরিষা, চাষাবাদ ও রোপা আমনের কাটা-মাড়াই। শীতের প্রভাব পড়েছে চলতি মৌসুমের ইরি-বোরো বীজতলাতেও।
ঘন কুয়াশার কারণে গত ৩ দিনে নওগাঁ-রাজশাহী মহাসড়কের মান্দায় বাস, প্রাইভেট কার ও ট্রাক-মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে ৫ জন এবং পোরশা উপজেলায় ১ জনসহ মোট ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত ৭ দিন ধরে নওগাঁয় তাপমাত্রা উঠানামা করছে ৯ থেকে ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে। এর ফলে ভোর থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত এবং সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ঘন কুয়াশায় ঢেকে থাকছে জেলার শহর ও গ্রামীণ জনপদ।
এ কারণে দিনের বেলাতেও যানবাহনকে লাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কুয়াশা কমলেও বিকেলের দিকে আবারও শীত অনুভূত হতে শুরু করে। এ অবস্থায় ভোগান্তিতে পড়েছেন জেলার দিনমজুর, দরিদ্র ছিন্নমূল মানুষজনসহ রিকশা-ভ্যান চালকরা। তীব্র শীতে তাদের ঘর থেকে বের হওয়া কষ্টকর হয়ে পড়েছে। নওগাঁ শহরের রিকশা চালক মোসলেম উদ্দিন জানান, গত কয়েকদিন ধরে নওগাঁয় খুবই শীত। সকালে ঘন কুয়াশার কারণে ঘর থেকে বের হতে খুব কষ্ট হয়। ১০ হাত দূরে কি আছে তা দেখা যায় না। শহরতলীর রামভদ্রপুর গ্রামের ব্যাটারি চালিত রিকশা চালক টুকু মিয়া বলেন, ভোর থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত ঘন কুয়াশায় সব কিছু ঢেকে থাকছে। এ কারণে দিনের বেলাতেও লাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চালাতে হচ্ছে। কনকনে শীতের কারণে লোকজন ঘরের বাইরে খুব কম আসায় আয় অর্ধেকে অর্থাৎ ৩/৪শ টাকায় নেমে এসেছে। ঘন কুয়াশার কারণে গত ৩ দিনে নওগাঁ-রাজশাহী মহাসড়কের মান্দায় বাস, প্রাইভেট কার ও ট্রাক-মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে ৫ জন এবং পোরশা উপজেলায় ১ জনসহ মোট ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। শীতের প্রভাব পড়েছে ফসলেও। ঘন কুয়াশার কারণে পাতা মরে যাচ্ছে আলু, সরিষা, পেঁয়াজ, গমসহ বিভিন্ন শাকসবজির। একইভাবে ঘন কুয়াশার কারণে জেলায় ইরি-বোরো বীজতলাও ক্ষতির শিকার হচ্ছে। বীজতলার চারা গাছ লাল বর্ণ ধারণসহ মরে যেতে শুরু করেছে। তীব্র কনকনে শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে বিলম্বিত হচ্ছে চলতি মৌসুমের রোপা আমনের কাটা-মাড়াইও।
আত্রাইয়ের কৃষক মোস্তাক আহমেদ বলেন, ঘন কুয়াশার কারণে রোপা আমনের কাটা-মাড়াই অনেকটা ধীরগতিতে চলছে। সকাল ৯টার আগে তীব্র শীতের কারণে শ্রমিকরা মাঠে নামতে চান না। এছাড়া জমিতে কেটে রাখা ধান শুকাতেও বিলম্ব হচ্ছে ঘন কুয়াশা ও রৌদ্র না থাকায়। বদলগাছী সদরের কৃষক ফেরদৌস হোসেন বলেন, কয়েকদিন ধরে ঘন কুয়াশা ও মৃদু শৈত্যপ্রবাহের ফলে ক্ষতির মুখে পড়েছে ইরি-বোরো বীজতলা। বীজতলার চারা গাছ লাল বর্ণ ধারণসহ মরে যেতে শুরু করেছে। পাতা মরে গিয়ে লাল বর্ণ ধারণ করে ক্ষতি হচ্ছে চলতি মৌসুমের আলু, সরিষা, পেঁয়াজসহ অন্যান্য ফসলের।
এ অবস্থায় ফসল রক্ষায় আলু, সরিষা, পেঁয়াজসহ রবিশস্য রক্ষায় ছত্রাকনাশক স্প্রে করা এবং ইরি-বোরো বীজতলা ঘন কুয়াশার জন্য পলিথিনে মুড়িয়ে রাখা ও বীজতলা পানি দিয়ে ডুবিয়ে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, নওগাঁর উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ। কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, জেলায় ১ লাখ ৯৩ হাজার হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো চাষের জন্য ১০ হাজার হেক্টর জমিতে ইরি-বোরোর বীজতলা এবং আলু, সরিষা, পেঁয়াজ, গম, ভুট্টাসহ ১ লাখ ১১ হাজার হেক্টর জমিতে রবিশস্য চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় ৯০ ভাগ রবিশস্যের রোপণ সম্পন্ন হয়েছে।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জেলার ৯৯টি ইউনিয়ন ও ৩টি পৌরসভার দরিদ্র শীতার্ত মানুষের জন্য ১ লাখ শীতবস্ত্র চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। শীতবস্ত্র পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা বিতরণ করা হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক আব্দুল আউয়াল। তবে এখন পর্যন্ত জেলা প্রশাসনের চাহিদা মোতাবেক সরকারি শীতবস্ত্র বরাদ্দ না আসলেও জেলার ১১ উপজেলায় ৩ লাখ করে মোট ৩৩ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। নওগাঁ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার রবীন শীষ জানান, ৩ লাখ টাকায় শীতবস্ত্র ক্রয় করে আজ বৃহস্পতিবার থেকে শীতার্ত মানুষের মাঝে বিতরণ শুরু হয়েছে।