• 23 Jan, 2025

নসরুল হামিদের ভূমিকা নিয়ে বিতর্কিত এলএনজি আমদানি চক্রের জাল, ৬ বছরে ব্যয় ১ লাখ ৬৬ হাজার কোটি টাকা

বাংলাদেশে এলএনজি আমদানিতে বিশাল খরচ এবং ব্যবসায়ী চক্রের প্রভাব নিয়ে বিতর্ক চলছে। সাবেক প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের সময়ে সিঙ্গাপুর ও সুইজারল্যান্ডের দুটি কোম্পানির মাধ্যমে অধিকাংশ এলএনজি সরবরাহ হয়। ৬ বছরে খরচ হয়েছে ১ লাখ ৬৬ হাজার কোটি টাকা। বিশেষজ্ঞদের মতে, সরকার কাঠামোগত পরিবর্তনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণমূলক এ চক্র ভাঙার উদ্যোগ নিতে হবে।

বাংলাদেশে এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) আমদানিতে সরকারের বিশাল খরচ এবং এর নেপথ্যে কাজ করা ব্যবসায়ী চক্র নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে। গত ছয় অর্থবছরে এ খাতে ব্যয় হয়েছে ১ লাখ ৬৬ হাজার কোটি টাকা। বেসরকারি খাতের বিভিন্ন কোম্পানির মধ্যে সিঙ্গাপুরের ভিটল এশিয়া, গানভর, সুইজারল্যান্ডের টোটাল এনার্জিস এবং যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাকসিলারেট এনার্জির দিকে সুবিধাভোগী হিসেবে আঙুল তোলা হয়েছে। এসব কোম্পানির মধ্যে অন্তত দুটি সরাসরি নসরুল হামিদের সঙ্গে জড়িত ছিল বলে জানায় জ্বালানি খাতের একাধিক সূত্র।

জ্বালানি বিভাগের এক প্রতিবেদনে জানা যায়, গত অর্থবছরেই এলএনজি আমদানিতে ব্যয় হয়েছে ৪২ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা। প্রাথমিকভাবে সরকারি পর্যায়ে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় এলএনজি আমদানি শুরু হলেও পরবর্তীতে খোলাবাজারেও আমদানি করা হয়। ভিটল এশিয়া ও গানভর গত ছয় বছরে প্রায় ৬০ শতাংশ এলএনজি সরবরাহ করেছে। এ কোম্পানির সঙ্গে সাবেক প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ ও তার পরিবারের সংশ্লিষ্টতা থাকার অভিযোগ উঠেছে। নসরুল হামিদ ২০১৪ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন এবং তার সময়ে ভিটল ও গানভর সবচেয়ে বেশি এলএনজি সরবরাহের সুযোগ পায়।

এলএনজি আমদানির জন্য ২৩টি কোম্পানির একটি তালিকা থাকলেও কয়েকটি নির্দিষ্ট কোম্পানিই প্রায় সব কাজ পেয়ে আসছে। প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র প্রক্রিয়ায় অংশ নিলেও বেশিরভাগ কোম্পানি শেষ পর্যন্ত কাজ পায়নি। দরপত্র প্রক্রিয়ায় নিয়ন্ত্রণের ফলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোই কাজ পেতে থাকায় এ খাতে একটি প্রভাবশালী চক্রের জন্ম হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

এছাড়াও আন্তর্জাতিকভাবে বিতর্কিত কোম্পানি ভিটল এশিয়া এবং গানভর বিভিন্ন দেশে দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত। যুক্তরাষ্ট্রের ফরেন করাপ্ট প্র্যাকটিসেস অ্যাক্ট লঙ্ঘনের দায়ে এদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় বড় অঙ্কের জরিমানাও আরোপ করা হয়েছে। গত মার্চে ইকুয়েডরে ঘুষ দেওয়ার দায়ে গানভরকে জরিমানা করা হয় ৬৬ কোটি ডলার।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এ বিষয়ে জানান, "কিছু নির্দিষ্ট কোম্পানির মাধ্যমে এলএনজি সরবরাহের বিষয়টি জানা গেছে এবং দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে নতুন তালিকা প্রণয়ন করা হবে। আপাতত গ্যাস সংকট মোকাবিলায় পুরনো তালিকা ধরে কাজ চলছে।"

বিশেষজ্ঞরা শুরু থেকেই এলএনজি আমদানির পরিবর্তে দেশে গ্যাস অনুসন্ধান ও স্থানীয় গ্যাস উৎপাদনে জোর দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে আসছেন। দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রধান এবং টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “শুরুতেই দায়মুক্তি আইনের মাধ্যমে উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার সুযোগ বন্ধ করা হয়েছে। যদিও তালিকাভুক্ত ২৩টি কোম্পানি রয়েছে, বাস্তবে অল্প কয়েকটি কোম্পানিই কাজ পেয়েছে। কাঠামোগত পরিবর্তনের অভাবে এ সুবিধাভোগী চক্র এখনো সক্রিয়।”

এলএনজি ব্যবসায় নিয়ন্ত্রণের চক্রটি ভাঙতে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে দ্রুত ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।

নিউজ ডেস্ক

প্রভাত সময় ২৪