• 22 May, 2025

রিকশাচালক থেকে কোটিপতি: আওয়ামী লীগ নেতার দখল ও প্রতারণার দাপটে অসহায় ব্যবসায়ীরা

রিকশাচালক থেকে কোটিপতি: আওয়ামী লীগ নেতার দখল ও প্রতারণার দাপটে অসহায় ব্যবসায়ীরা

লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে আওয়ামী লীগ নেতা নুরুল করিমের বিরুদ্ধে জমি দখল, ব্যবসায়ীদের হয়রানি এবং আদম ব্যবসার নামে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে। একসময় রিকশাচালক থাকলেও এখন তিনি কোটি টাকার মালিক। করইতলা বাজারের ব্যবসায়ীরা তার প্রভাবের কাছে অসহায়। ভুক্তভোগীরা তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে আওয়ামী লীগ নেতা নুরুল করিমের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, জমি দখল, ব্যবসায়ী হয়রানি এবং আদম ব্যবসার নামে প্রতারণার একাধিক গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। একসময় রিকশাচালক ছিলেন বলে পরিচিত এই নেতা, বর্তমানে দখল ও প্রতারণার মাধ্যমে কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা তার অর্থ ও প্রভাবের কাছে অসহায়।

রোববার (১ ডিসেম্বর) কমলনগরের করইতলা বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ী এবং ভুক্তভোগী ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নুরুল করিম নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করে একাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের জমি দখল করেছেন। এছাড়া আদম ব্যবসার নামে প্রতারণা করে গ্রামের অসহায় মানুষের কাছ থেকে কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জীবনের শুরুর দিকে নুরুল করিম রিকশাচালক এবং ট্রলি চালকের কাজ করতেন। মাঝে মাঝে গাছ কাটার কাজেও তাকে দেখা যেত। এরপর তিনি সৌদি আরবে কাজের খোঁজে যান। বিদেশ থেকে ফিরে এসে তিনি আদম ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে অসহায় মানুষদের বিদেশ পাঠিয়ে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেন। বিদেশে গিয়ে ওই লোকজন আকামা না পেয়ে কষ্টকর জীবনযাপন করতেন। তাদের পরিবার স্থানীয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করলেও ক্ষমতার প্রভাব দেখিয়ে তিনি সবসময়ই রেহাই পেতেন।

নুরুল করিমের বিরুদ্ধে করইতলা বাজারের সরকারি ও ব্যক্তিগত জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে। তিনি বাজারের গণশৌচাগার ভেঙে সেখানে দোকানঘর নির্মাণ করেছেন। এ ঘটনায় বাজার পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নূরে আলম মোর্শেদ বলেন, “আমাদের বাজারে একটি গণশৌচাগার ছিল। কিন্তু বিগত সরকারের সময়ে ক্ষমতার দাপট খাটিয়ে নুরুল করিম তা দখল করে দোকানঘর নির্মাণ করেন।” ব্যবসায়ী রোকন উদ্দিন জানান, নুরুল করিম এবং তার দুই ছেলে তার দোকান দখল করার জন্য ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না দেওয়ায় তারা তার দোকানের কর্মচারীদের মারধর করে দোকান থেকে বের করে দেন। এরপর দোকানের ক্যাশবাক্স থেকে নগদ ১ লাখ ৪২ হাজার টাকা নিয়ে যান এবং দোকানের মালামাল নষ্ট করে প্রায় ২৫ লাখ টাকার ক্ষতি করেন। এ ঘটনায় রোকন আদালতে মামলা করেন। স্থানীয় বাসিন্দা মনির হোসেন জানান, নুরুল করিম তার ছেলেকে সৌদি আরব পাঠানোর জন্য ৪ লাখ টাকা নেন। কিন্তু সেখানে গিয়ে ছেলের আকামা না পাওয়ায় তাকে পালিয়ে গিয়ে কাজ করতে হয়। মনির হোসেন বলেন, “আমার ছেলে অনেক কষ্ট করেছে। বিষয়টি নিয়ে আমি প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।”

নুরুল করিম আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক এবং সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ফরিদুন্নাহার লাইলির ঘনিষ্ঠ অনুসারী ছিলেন। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, এই সম্পর্ক ব্যবহার করে তিনি তার প্রভাব বিস্তার করেছেন। চরলরেন্স ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সিরাজুল ইসলাম বলেন, “জীবনের শুরুতে রিকশাচালক থাকলেও এখন তিনি কোটি টাকার মালিক। প্রতারণা ও দখলই তার প্রধান পেশা।” অভিযোগ প্রসঙ্গে নুরুল করিম বলেন, “আমি কাউকে কোনো হয়রানি করছি না। আইনিভাবে লড়াই করছি। আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে তা মিথ্যা।”

কমলনগর থানার ওসি তৌহিদুল ইসলাম বলেন, “আমরা আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে জমি দখলসহ প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ শুনেছি। তবে থানায় কেউ সুনির্দিষ্ট কোনো লিখিত অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” ভুক্তভোগীরা দাবি করেছেন, নুরুল করিমের দখল বাণিজ্য এবং প্রতারণার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। স্থানীয় প্রশাসনকে সঠিক তদন্তের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্তদের ন্যায্য অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

নিউজ ডেস্ক

প্রভাত সময় ২৪