নওগাঁ সদর হাসপাতালে ইসিজি পরীক্ষার জন্য সরকার নির্ধারিত ৮০ টাকার পরিবর্তে দ্বিগুণ অর্থ আদায় হচ্ছে, এমন অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি এই হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীদের কাছ থেকে রসিদ ছাড়াই ১৬০ টাকা করে আদায় করার ঘটনা সবার সামনে এসেছে। অভিযোগ অনুযায়ী, এই ফি আদায়ের মাধ্যমে মাসে অন্তত আড়াই লাখ টাকা আত্মসাত করা হচ্ছে। সরকারি রসিদে ৮০ টাকার যে ফি নির্ধারণ করা হয়েছে, তা আদায়ে একটি আউটসোর্সিং কর্মী প্রতিদিনই দায়িত্ব পালন করেন। তবে গত দুই মাসে এমন অভিযোগ উঠেছে যে, হাসপাতালের ইসিজি কক্ষে দ্বিগুণ টাকা আদায় করা হচ্ছে, যা এক ধরনের অসাধু কার্যকলাপের ইঙ্গিত দেয়। সরেজমিনে দেখা গেছে, জরুরি বিভাগের সামনে ইসিজি কক্ষে কর্মরত মাস্ক পরিহিত এক নারী কর্মী রোগীদের কাছ থেকে রসিদ ছাড়াই ১৬০ টাকা আদায় করছেন। যখন ঘটনাটি সামনে আসে, তখন ওই নারী দাবি করেন যে, জরুরি পরিস্থিতিতে রসিদ না দেওয়ার জন্য কিছুটা বাধ্য হয়েছেন তিনি। তবে তিনি জানান, যদি রোগীরা রসিদ চান, তবে তা অবশ্যই প্রদান করা হবে।

এছাড়া, হাসপাতালের বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে যে, এই অতিরিক্ত ফি আদায়কারী সিন্ডিকেটটি মূলত আউটসোর্সিং কর্মী আরাফাত হোসেন লেমনের নেতৃত্বে পরিচালিত হচ্ছে। লেমনসহ অন্যান্য কর্মীরা, মৌসুমী আক্তার ও জান্নাত, এই সিন্ডিকেটে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। হাসপাতালের ইসিজি ইউনিটে প্রতি ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ১০০ জন রোগী ইসিজি করাতে আসেন। হিসাব অনুযায়ী, প্রতিদিন প্রায় ১৬০ টাকা অতিরিক্ত আদায় করা হচ্ছে, যার ফলে প্রতিমাসে এই ফি আদায়কারী সিন্ডিকেট প্রায় আড়াই লাখ টাকা কামাচ্ছে। এ ঘটনার ফলে হাসপাতালের সাধারণ রোগীরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। বদলগাছী উপজেলার শ্যামপুর গ্রামের আবির উদ্দিন জানান, তার হৃদরোগে আক্রান্ত স্ত্রীকে হাসপাতালে আনলে ইসিজি করানোর পর ১৬০ টাকা অতিরিক্ত নেওয়া হয়। তিনি বলেন, "যতবারই রসিদ চাই, ততবারই তারা অস্বীকার করে।"

অপরদিকে, নওগাঁ পৌরসভার কোমাইগাড়ী এলাকার শিউলি বেগমও একই অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন, “ইসিজি পরীক্ষার পর আমি রসিদ ছাড়াই অতিরিক্ত টাকা প্রদান করেছি।” হাসপাতালের ইসিজি ইউনিটের ইনচার্জ কার্ডিওগ্রাফার মোমো এই বিষয়ে জানান, "রসিদ ছাড়া টাকা আদায়ের বিষয়টি আমি তত্ত্বাবধায়ককে জানিয়েছি এবং এটি তদন্তের জন্য পাঠানো হবে।" তিনি আরও জানান, ইসিজি ইউনিটের দায়িত্ব থাকলেও ২৪ ঘণ্টা নজরদারি রাখা সম্ভব না হওয়ায় এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে।
সিন্ডিকেটের কার্যক্রম:
এছাড়া, একাধিক হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ইসিজি ইউনিটে যখন আরাফাত হোসেন লেমন দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তখন থেকেই এই অনিয়মের সূচনা। তার নেতৃত্বে কর্মীরা রসিদ ছাড়া টাকা আদায়ের জন্য একটি সক্রিয় সিন্ডিকেট গঠন করে। সিন্ডিকেটের সদস্যরা নিয়মিতভাবে রোগীদের কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত ফি ছাড়াও অতিরিক্ত অর্থ আদায় করেন। সূত্র জানায়, হাসপাতালের জরুরি বিভাগে প্রতিদিন ১০০ জন রোগী ইসিজি করাতে আসেন, যার ফলে এই সিন্ডিকেট একদিনে ১৬,০০০ টাকা এবং মাসে প্রায় আড়াই লাখ টাকা আদায় করতে সক্ষম।
হাসপাতাল প্রশাসনের পদক্ষেপ:
এ বিষয়ে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. জাহিদ নজরুল চৌধুরী জানান, “এই ঘটনার সত্যতা পাওয়ার পর আমি বিষয়টি তৎক্ষণাত তদারকির জন্য প্রক্রিয়া শুরু করেছি। যে বা যারা এ ঘটনায় জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে তদন্তের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তিনি আরও বলেন, “আগামীতে এমন ঘটনা যাতে আর না ঘটে, সেজন্য ইসিজি ইউনিটে আরও শক্ত নজরদারি ব্যবস্থা চালু করা হবে এবং সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বশীলতার সাথে কাজ করতে বলা হবে।” এছাড়া, তিনি নিশ্চিত করেছেন যে, জরুরি বিভাগে নতুন নজরদারি ব্যবস্থা চালু করা হবে যাতে রসিদ ছাড়া টাকা আদায়ের মতো ঘটনা আর না ঘটে।