নওগাঁ জেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জাল সনদ ব্যবহার করে চাকরি নেওয়ার ঘটনায় ২০ জন শিক্ষকের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। এদের মধ্যে ১০ জন এমপিওভুক্ত শিক্ষক, যারা সরকারি কোষাগার থেকে ৬৫ লাখ ৯৭ হাজার ৩৭৬ টাকা বেতন তুলেছেন। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) সনদ যাচাইয়ে এ প্রতারণার ঘটনা প্রকাশ পায়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ২০২৩ সালের মে মাসে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে জাল সনদধারী শিক্ষকদের তালিকা প্রকাশ করে। তাদের এমপিও স্থগিত ও চাকরিচ্যুত করার নির্দেশ দেওয়া হলেও গত দেড় বছরে উল্লেখযোগ্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। অভিযুক্ত শিক্ষকরা এখনও অনেক ক্ষেত্রে কর্মরত আছেন, এবং বেতন ফেরত আনার প্রক্রিয়ায় শিথিলতার অভিযোগ উঠেছে।
জাল সনদধারী শিক্ষকদের তালিকা ও বেতন উত্তোলন :
১. উম্মে রুহানী
প্রতিষ্ঠান: শেরে বাংলা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়।
সনদ: নেকটার, বগুড়ার জাল সনদ।
উত্তোলিত বেতন: ১৩,৯১,৮৮৭ টাকা।
২. সাঈদ মো. রশিদুল যোবায়েদ
প্রতিষ্ঠান: চক আতিথা উচ্চ বিদ্যালয়।
সনদ: যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, নওগাঁর জাল সনদ।
উত্তোলিত বেতন: ১০,৩৩,২১৮ টাকা।
৩. মো. রেফাজ আহম্মেদ
প্রতিষ্ঠান: শিকারপুর নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়।
সনদ: শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের জাল সনদ।
উত্তোলিত বেতন: ৫,৪০,৯৮০ টাকা।
৪. অবিনাশ চন্দ্র প্রামাণিক
প্রতিষ্ঠান: কুশাডাঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়।
সনদ: শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের জাল সনদ।
উত্তোলিত বেতন: ১,৫১,৫৫৫ টাকা।
৫. মো. মাহমুদ হাসান মন্ডল
প্রতিষ্ঠান: গাঙ্গুরিয়া ডিগ্রি কলেজ।
সনদ: নেকটার, বগুড়ার জাল সনদ।
উত্তোলিত বেতন: ৯,৩৪,৯৬১ টাকা।
৬. মো. তোজাম্মেল হক
প্রতিষ্ঠান: নিসকিনপুর উচ্চ বিদ্যালয়।
সনদ: নেকটার, বগুড়ার জাল সনদ।
উত্তোলিত বেতন: ৮,৫৪,০৬৫ টাকা।
৭.পাপিয়া খান
প্রতিষ্ঠান: মান্দা থানা আদর্শ বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ।
সনদ: শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের জাল সনদ।
উত্তোলিত বেতন: ৫,০২,৪৬০ টাকা।
৮. ইয়ারুন নাহার
প্রতিষ্ঠান: চক মুখী উচ্চ বিদ্যালয়।
সনদ: শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের জাল সনদ।
উত্তোলিত বেতন: ৪,৬৮,৮৬০ টাকা।
৯. মো. মোজাহারুল ইসলাম
প্রতিষ্ঠান: চক শিমলা উচ্চ বিদ্যালয়।
সনদ: শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের জাল সনদ।
উত্তোলিত বেতন: ৪,৬৮,৪৪০ টাকা।
১০. মো. শরিফুল ইসলাম
প্রতিষ্ঠান: সুদরানা মাধ্যমিক বিদ্যালয়।
সনদ: শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের জাল সনদ।
উত্তোলিত বেতন: ২,৫০,৯৫০ টাকা।
এছাড়া আরও কিছু নাম রয়েছে যারা এমপিওভুক্ত না হওয়ায় সরকারি কোষাগার থেকে বেতন পাননি। তবে তারা একইভাবে জাল সনদের মাধ্যমে চাকরিতে নিয়োজিত।
কিছু প্রতিষ্ঠান প্রধান এবং পরিচালনা কমিটি অভিযুক্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারে উদাসীন। বিষয়টি নিয়ে জেলা শিক্ষা অফিস থেকেও সুনির্দিষ্ট কোনো কার্যক্রম দৃশ্যমান নয়। অভিযুক্ত শিক্ষকরা নিজেদের নির্দোষ দাবি করে উচ্চ আদালতে আপিল করেছেন। ফলে, বেতন ফেরত পাওয়া বা আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া বিলম্বিত হচ্ছে। জাল সনদ যাচাই-বাছাই এবং দায়ী শিক্ষকদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে তৎপরতা বাড়ানো জরুরি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় প্রশাসনের সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া সরকারি কোষাগারে ক্ষতিপূরণ ফেরত আনা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। এই প্রতিবেদনে আলোচিত বিষয়গুলো নওগাঁ জেলার শিক্ষা ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে এই ঘটনা প্রাতিষ্ঠানিক অব্যবস্থাপনার বড় উদাহরণ হয়ে থাকবে।