নওগাঁর সাপাহার উপজেলায় গভীর নলকূপ ও এলএলপি অপারেটর নিয়োগে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে বিক্ষুব্ধ কৃষক জনতা বিএমডিএ অফিস ঘেরাও করে বিক্ষোভ প্রদর্শন ও অফিসে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে মানববন্ধন করেছেন। একই দিন সকালে নওগাঁর মান্দায় গভীর নলকূপের অপারেটর নিয়োগে অনিয়ম ও অর্থ বাণিজ্যের অভিযোগে বিএমডিএ অফিস ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেছেন বিক্ষুব্ধ কৃষক ও জনতা।
রোববার (৫ জানুয়ারি) দুপুর ১২টায় উপজেলা বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ সহকারী প্রকৌশলীর কার্যালয়ে উপজেলার বিক্ষুব্ধ কৃষক জনতা অফিস ঘেরাও করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। এ সময় জনতা অফিসে তালা লাগিয়ে দিয়ে অফিসের সামনে মানববন্ধন করেন। স্থানীয় বাবুল আকতার জানান, উপজেলার ৩২৩টি ডিপ টিউবওয়েল ও ৭২টি এলএলপি সহ মোট ৩৯৫টি টিউবওয়েলের অপারেটর নিয়োগ গত বৃহস্পতিার (১৯ ডিসেম্বর ২০২৪) বিএমডিএর গভীর নলকূপ ও এলএলপি অপারেটর নিয়োগ পরীক্ষা সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয় এবং গত বৃহস্পতিার (২ জানুয়ারি ২০২৫) বেলা ১১টায় নোটিশ বোর্ডে এর ফলাফল টাঙানো হয়।
এ সময় বিক্ষুব্ধ কৃষক মো. জালাল উদ্দীন, মতিউর রহমান, কামরুজ্জামান, বাবুল আকতার ও মোশারফ অভিযোগ করে বলেন, অবৈধভাবে টাকার বিনিময়ে বিএমডিএ কর্মকর্তা প্রকৌশলী তরিকুল ইসলাম, উপসহকারী প্রকৌশলী আব্দুর রব ও হিসাব রক্ষক রেখা রানী সাহা আওয়ামী লীগের সমর্থিত ব্যক্তিদের অপারেটর নিয়োগ প্রদান করেন। অভিযোগকারীরা ও বিক্ষুব্ধ কৃষক জনতা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সুদৃষ্টি কামনা করে বলেন, অবিলম্বে উক্ত কর্মকর্তাদের পদত্যাগ দাবি সহ তদন্ত সাপেক্ষে সুষ্ঠুভাবে অপারেটর নিয়োগ দেওয়া না হলে আবারো অফিস ঘেরাও সহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণের হুঁশিয়ারি প্রদান করেন। উল্লেখ্য, আন্দোলন চলাকালে অফিসে আয়া, আনসার সদস্য ছাড়া কোনো কর্মকর্তাকে উপস্থিত পাওয়া যায়নি। অপারেটর নিয়োগে অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে জানার জন্য বিএমডিএ সাপাহার সহকারী প্রকৌশলী তরিকুল ইসলামের ০১৭৫৬ ২৬৫ ৫৫৬ নম্বরে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। এদিকে, নওগাঁর মান্দায় গভীর নলকূপের অপারেটর নিয়োগে অনিয়ম ও অর্থ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে বিএমডিএ’র সহকারী প্রকৌশলী এসএম মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে। এর প্রতিবাদ জানিয়ে আজ রোববার বেলা ১১টার দিকে বিএমডিএর কার্যালয় ঘেরাও করে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেন বঞ্চিতরা। ফল প্রকাশের পর থেকে বিএমডিএ মান্দা জোনের সহকারী প্রকৌশলী এসএম মিজানুর রহমান লাপাত্তা রয়েছেন। অবিলম্বে তাকে প্রত্যাহারের দাবি জানান বিক্ষোভকারীরা।
এদিকে রোববার অফিস ঘেরাও করার সংবাদ পেয়ে সটকে পড়েন বিএমডিএর সহকারী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান। এ সময় কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অফিসে উপস্থিত ছিলেন না। অফিস সহায়ক ছাড়া আরও কাউকেই পাওয়া যায়নি। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, আবেদনের সময় প্রতিটি ফরমে ১ হাজার টাকা করে নেওয়া হয়েছে। অনেক আবেদনকারী মৌখিক পরীক্ষায় অংশ না নিলেও অপারেটর পদে নিয়োগ পেয়েছেন। চাষযোগ্য জমি না থাকলেও অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ পেয়েছেন কেউ কেউ। বিএমডিএ কার্যালয় থেকে জানা গেছে, মান্দা উপজেলায় ৪৮৪টি গভীর নলকূপ রয়েছে। চলতি মৌসুমে এসব নলকূপে অপারেটর নিয়োগের জন্য ১ হাজার টাকার বিনিময়ে আবেদন ফরম বিক্রি করে মান্দা বিএমডিএ কর্তৃপক্ষ। এতে ৭৬৪টি ফরম বিক্রি হয়। এর মধ্যে একক আবেদন পড়ে ২৮৯টি গভীর নলকূপে এবং ১৬৫ নলকূপের বিপরীতে আবেদন পড়ে ৪৭৫টি। ৩০টি নলকূপে আবেদন না পড়ায় সেগুলো স্থগিত রাখা হয়েছে। ১৬৫ নলকূপে নতুন অপারেটর নিয়োগ পেয়েছেন। স্থগিত ৩০টির বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে পত্র দেওয়া হয়েছে। কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সেগুলোর সেচকাজ পরিচালনা করা হবে।
উপজেলার বাঙালপাড়া গ্রামের কৃষক শামীম হোসেন বলেন, গভীর নলকূপের অপারেটর নিয়োগে ব্যাপক অনিয়ম ও কারচুপি করা হয়েছে। মৌখিক পরীক্ষা অংশ নেননি এমন ব্যক্তিরাও নিয়োগ পেয়েছেন টাকার বিনিময়ে। চাষযোগ্য জমি না থাকলেও অনেককেই অপারেটর পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ অস্বীকার করে মান্দা বিএমডিএর সহকারী প্রকৌশলী এসএম মিজানুর রহমান মোবাইল ফোনে বলেন, তথ্য সংক্রান্ত জটিলতার কারণে অনেক আবেদন বাতিল হয়েছে। মৌখিক পরীক্ষায় অংশ না নেওয়া কাউকেই নিয়োগ দেওয়া হয়নি। তারা কী কারণে অফিস ঘেরাও করে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সভা করেছে এটি আমার জানা নেই।